শুক্রবার ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
For Advertisement
আমার ডি*ভোর্স চাই মৌনতা, আমার মা বংশের প্রদীপ চান, তুমি অক্ষম তা তুমি জানো।
১ জুন, ২০২৪ ৮:২৫:৫৭

আমার ডি*ভোর্স চাই মৌনতা, আমার মা বংশের প্রদীপ চান, তুমি অক্ষম তা তুমি জানো। আমি আমার মায়ের একমাত্র ছেলে।
কোনো দিন মায়ের ইচ্ছে অপূর্ণ রাখিনি এই ইচ্ছে ও অপূর্ণ রাখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তোমাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিবো। সাইন করে দিও। দয়াকরে কোনো সিন ক্রিয়েট করো না। তুমি মায়ের কিংবা আমার ইচ্ছে পূরণ করতে পারবেনা। আমারও একটা বাচ্চা চাই। আমিও বাবা ডাক শুনতে চাই। এখন তুমি আমার পথে কাঁটা হয়ে কেনো থাকতে চাইছো বলোতো। আমার উপর একটু দয়াকরো মৌনতা। সমস্যা তো তোমার। আমার তো নয়। সোমবারে ডি*ভোর্স লেটার আসবে সাইন করে দিও। আমি সামনের মাসের ২ তারিখ তিথিকে বিয়ে করছি। তোমার দাওয়াত রইলো।’
চিঠিটা পড়ে কতোক্ষণ থম মেরে বসে রইলো মৌনতা। দিপ্ত এতোটা পরিবর্তন হয়ে যাবে কখনো ভাবেনি মৌনতা। খাটে হেলান দিয়ে চোখ বুজলো সে। চোখের কোণা বেয়ে পড়লো নোনাজল। এই কি সেই দিপ্ত যে তাকে হাজারো স্বপ্ন দেখিয়েছিলো আজ সব মিথ্যা হয়ে গেলো। বিয়ের প্রথম একবছর ভালো গেলেও। পরবর্তীতে বাচ্চা হওয়া নিয়ে অনেক কথা শুনতে হয়েছে মৌনতাকে। মৌনতা চোখ বুজে হারিয়ে গেলো অতীতে। দিপ্তর সাথে পরিচয়টা হয়েছিলো ক্লাস টেনে থাকতে। তখন দিপ্ত কেবল ইন্টারে পড়ে। এক বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যায় দেখা হয় তাদের।
স্কুলের ড্রেস পরনে দুই বিনুনি করা ছোট মেয়েটাকে দেখে চোখ আটকে যায় দীপ্তর। সেই শুরু। মৌনতার স্কুলের সামনে প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকতো সে। মৌনতা বুঝতোনা তাকে। প্রতিদিন স্কুল করে মৌনতা যখন ফুচকা খেতো। তখন দিপ্ত তার ঘামে ভেজা শার্টে, গরমে চুবচুবে হয়েও প্রশান্তির হাসি দিতো। এই মেয়েটার শান্ত, নিষ্পাপ মুখটাতে এতো মায়া। এই মেয়েটা একটা পরী। তার পরী। দিপ্ত নাম দিলো মেঘ পরী। মৌনতা প্রথম কয়েকদিন খেয়াল না করলেও পরে খেয়াল করলো একটা ছেলে প্রায়ই তার পিছু নেয়। মৌনতা বরাবরই শান্ত শিষ্ট, ভদ্র মেয়ে। প্রেম, ভালোবাসার পাশ দিয়েও সে যায়না। একদিন ফাঁকা রাস্তায় দিপ্ত মৌনতাকে বলেই ফেললো ভালোবাসার কথা। মৌনতা মানেনি। বাবা,মায়ের একমাত্র সন্তান সে। বাবা কত স্বপ্ন দেখেন তাকে নিয়ে এসব তাকে মানায় না। দিপ্ত নাছোড়বান্দা। তার মৌনতাকে চাই মানে চাই। মৌনতা যখন রাজি হচ্ছিলনা। তখন আত্মহত্যার ভয় দেখায় সে। দিপ্তর কথায় কি ছিলো মৌনতা জানেনা তবে মেনে নিলো তাকে।
এরপর একসাথে ঘুরে বেড়ানো, স্কুল ফাঁকি দেওয়া, মুভি দেখা, পার্কে বসে বাদাম খাওয়া আরো কত সুন্দর মুহূর্ত। কিশোরী মৌনতা পাগল হয়ে গিয়েছে দিপ্তর প্রেমে। দিপ্তও তাই। মৌনতাকে ছাড়া যেনো সে অচল।তখন মৌনতা কলেজে পড়ে। দিপ্ত অনার্সে। মৌনতার বাবা দেখে ফেলেন তাদের একসাথে। সেইদিন প্রথম হাত উঠিয়েছিলেন নিজের কলিজার টুকরার উপর। মৌনতার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। মৌনতা যখন ভার্সিটি উঠলো তখন বিয়ে আসা শুরু করে তার জন্য। দিপ্তর প্রেমে পাগল মৌনতা বিয়ে করবেনা বলে জানিয়ে দেয়। দিপ্তর তখন চাকুরী নেই। মৌনতার বাবা কখনো একটা বেকার ছেলের সাথে তাকে বিয়ে দিবেন না। এদিকে দিপ্ত সময় চাচ্ছে। অকুল পাথারে পড়লো মৌনতা। একদিকে ভালোবাসা অপরদিকে পরিবার। বয়সও তো থেমে থাকেনা। এরমাঝেই মৌনতার বাবা মারা যান। মৌনতার মা পুরোপুরি ভেঙে পড়েন। পাগল হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। মানুষের অনেক কটুকথা শুনতে হয়েছে মৌনতাকে। অতপর এলো সে শুভক্ষণ। আট বছরের ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো তাদের।
প্রথম একবছর সব ঠিক ছিলো। ভালোবাসায় ভরে গিয়েছিলো তাদের সংসার। দিপ্তের পরিবারে তার মা আর বড়বোন। বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তিনজনের সংসার। দিপ্ত যেনো চোখে হারায় মৌনতাকে। মায়ের বারণ শুনেও ছেলেটাকে বিয়ে করে সে সুখী হয়েছে। শাশুড়ী মায়ের ব্যবহারও খুবই ভালো। দিপ্ত বাসর রাতে মৌনতার কপালে চুমু খেয়ে বলেছিলো, যতই বিপদ আসুক কখনো একে অপরকে ছেড়ে যাবোনা। পাশে থাকবো সবসময়।
দিপ্ত তার কথা রাখেনি। বিয়ের ছয়মাসের মাথায় প্রেগন্যান্ট হয়ে যায় মৌনতা। চারিদিকে খুশির আমেজ। দিপ্তকে যখন বলেছিলো তখন সে কি খুশি ছেলেটার। সারা এলাকা মিষ্টি বিতরণ আরো কত শত পাগলামি। তবে বিপত্তি ঘটে তিনমাসের মাথায়। সিঁড়ি থেকে পড়ে মিসক্যারেজ হয়ে যায় মৌনতার। ডাক্তার বলেদিলেন মা হওয়ার সম্ভবনা ক্ষীণ মৌনতার। সেই আসল রূপ দেখানো শুরু করলো দিপ্ত আর তার মা। মৌনতা কখনো কল্পনাও করেনি তার দিপ্ত, তার আট বছরের ভালোবাসা এতো খারাপ। এতো নিষ্ঠুর। শুরু হলো মধুর প্রণয়ের উল্টোপিঠ।
শাশুড়ী মায়ের নতুুন রূপে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো সে। উঠতে বসতে খোঁটা, কল*ঙ্কিনী, কালসাপ আরো কত কথা শুনতে হয়েছে তাকে। দিপ্ত সব দেখেও ভাবলেশহীন। তার যেনো কিছুই যায় আসেনা। কথা বলা কমিয়ে দিয়েছে। কেবল রাতে প্রয়োজনীয় সময়টুকু কাছে টেনে নিয়ে জান, প্রাণ বললেও সকালে সেই আগের মতো।
একদিনের একটা ঘটনা মনে পড়লে আজো শিউরে উঠে মৌনতা। তরকারিতে বেশি লবণ হয়ে গিয়েছে দেখে মৌনতার শাশুড়ী প্লেটটা ছুঁড়ে ফেললেন তার দিকে। দিপ্ত বাড়ি নেই। ইচ্ছে মতো কথা শুনিয়ে একটা চড় মারলেন তার গালে।’বেয়াদব, অসভ্য। আমার ছেলের মাথাটা খেয়েছে। বাজা মেয়ে মানুষ। এই তুই তো মা হতে পারবিনা। তাহলে তুই তো মেয়ে জাতেই পড়িসনা। যেই তোর মা দেখছে আমার ছেলে সরকারি চাকুরি করে অমনি বিয়েটা দিয়ে দিলো। তুই মরতে পারিস না অলক্ষী। তোর মরা বাপে তো বেঁচে গেলো। মা, আমার বাবার সম্পর্কে কিছু বলবেন না দয়াকরে। আসমা বেগম রেগে গেলেন মুহূর্তে।’তোরে যদি আজ এই বাড়ি থেকে বের না করছি তো আমিও আসমা না।’ মৌনতা ছুটে গেলো ঘরে। আর কত সহ্য করবে সে। সেও তো একটা মানুষ।
রাতে যখন দিপ্ত ফিরলো তখন ইনিয়েবিনিয়ে ছেলেকে রাগিয়ে দিলেন আসমা। এমনিতেই মাত্র অফিস থেকে ফিরেছে। তার উপরে পারিবারিক এসব কথায় মাথা খারাপ হয়ে গেলো দিপ্তর। ঘরে গিয়ে ডাকলো মৌনতাকে। মৌনতা ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। দিপ্তর ডাকে ঘুম ভাঙলো তার। চোখ মুছে যেই কিছু বলতে যাবে তার আগেই একটা চড় পড়ে তার গালে। মুহূর্তেই হতভম্ব হয়ে যায় মৌনতা। তারপর বেল্ট দিয়ে ইচ্ছে মতো দিপ্ত মেরেছে তাকে। মৌনতা টু শব্দটি করেনি। একসময় জ্ঞান হারায় সে। দিপ্ত ক্লান্ত হয়ে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। পরের দিন মৌনতা চলে আসে বাবার বাড়ি। মৌনতার মা মেয়ের দশা দেখে পুলিশ কেস করতে চান তবে মৌনতা না করে দেয়। এর পরেরদিন এসেই দিপ্ত হাতে পায়ে ধরে তাকে নিয়ে যায়। একটুও নির্যাতন কমেনি মা,ছেলের।
মৌনতার মর্জি না থাকলেও দিপ্ত মিলিত হতো তার সাথে। সে যেনো ভোগের পণ্য মাত্র। এভাবে শ্বশুড় বাড়িতে ঝামেলা হয় সে বাপের বাড়ি চলে আসে। আবার দিপ্ত এসে নিয়ে যায়। বিগত কয়েকটা মাস এমনই চলছে। পাড়া-প্রতিবেশীদের কটু কথায় আর কান দেয়না মৌনতা। এইবার যখন এলো আর দিপ্ত তাকে নিতে আসেনি। প্রায় চারমাস সে বাবার বাসায় তবে দিপ্ত আসেনি। এবার আসার আগে ঝগড়া লেগে মৌনতার শাশুড়ী তার হাতে গরম তেল ঢেলে দেয় কিন্তু দিপ্ত মায়ের বিরুদ্ধে একটা কথাও বলেনি। সেই রাগে চলে আসে মৌনতা।
এবারও ভেবেছিলো দিপ্ত আসবে। না, দিপ্ত আসেনি। একমাস, দুইমাস, তিনমাস, চারমাস কেটে গেলো। দিপ্ত আসেনি। এসেছে দিপ্তর হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত করা চিঠি।
চোখের পানিটা মুছে নিজের পেটে হাত বুলায় মৌনতা। দিপ্ত কি জানে এখানে দিপ্তর সন্তান বেড়ে উঠছে! চলবে, গল্প:- প্রণয়ের উল্টোপিঠ
পর্ব- ০১
Cumillar Voice’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
সর্বশেষ
For Advertisement
সম্পাদক : কাজী মোঃ সাইফুল ইসলাম
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী ফাতেমা আক্তার বৃষ্টি
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : জাগুরঝুলি বিশ্ব রোড, আদর্শ সদর, কুমিল্লা ৩৫০০.
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী ফাতেমা আক্তার বৃষ্টি
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : জাগুরঝুলি বিশ্ব রোড, আদর্শ সদর, কুমিল্লা ৩৫০০.
+880 1710-818277
+880 0161812800
ইমেইল : cumillavoice20@gmail.com
+880 0161812800
ইমেইল : cumillavoice20@gmail.com
Developed by RL IT BD
মন্তব্য