প্রচ্ছদ / জাতীয় / বিস্তারিত

For Advertisement

আমার ভাইয়ের পাতে দেয়া গোটা ডিমটার দিকে আমি তাকিয়ে আছি, ভাই গপাগপ ভাত গিলছে।

৪ মে ২০২৪, ৭:০১:২১

আমার ভাইয়ের পাতে দেয়া গোটা ডিমটার দিকে আমি তাকিয়ে আছি, ভাই গপাগপ ভাত গিলছে।

আমার ভাইয়ের পাতে দেয়া গোটা ডিমটার দিকে আমি তাকিয়ে আছি। ভাই গপাগপ ভাত গিলছে। আমার দিকে তাকিয়ে মা বললো
কী রে, ভাত খাচ্ছিস না কেনো?
মা, ডিম আর নেই?
না রে মা, আর নেই । আজ এমনিই খা। কাল তোকে পুরো ডিম দেবো।
মা, পরশু দিন আর তার আগের দিনও একই কথা বলেছিলে।
এতো কথা কিসের? তাড়াতাড়ি ভাত খা।বলেই মা চলে গেলেন।
২২ বছর পর..
ক্যারিয়ার ও সংসার জীবনে মোটামুটি  সফল একজন নারী আমি। ইচ্ছে করলেই সামর্থ্যের মধ্যে অনেক কিছু পেতে পারি। আজ আমার ছোট মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে ঘরোয়া একটা আয়োজন করেছি। কাছের কিছু আত্মীয় স্বজনরা এসেছেন।
আমার মা বললেন,
টাকা জমা। এতো খরচ করিস কেনো মেয়ের জন্য? তোর ভবিষ্যৎ নেই?
আমি বললাম,
তুমিও তো জমিয়েছিলে মা! তোমার ভবিষ্যৎ কী খুব রঙিন,  আলো ঝলমলে, চাকচিক্যময়?
মা মুখ নামিয়ে নিলেন। যে ছেলেকে এতো স্নেহে, এতো আপ্যায়নে বড়ো করেছেন সেই ছেলে এখন ক্যারিয়ার গড়তে গিয়ে কানাডা সেটেল হয়েছে। মায়ের জমানো সব টাকা সেই ছেলের পেছনে বিনিয়োগ করেছেন।  আর আমি টিউশন করে পড়াশোনা করেছি। অবাক লাগতো,  মা আমাকে কখনোই হাত খরচ দেয়ার কথা বলতেন না। তিনি মনে করতেন আমার পেছনে টাকা খরচ করা মানে জলে যাওয়া। মনে করার একমাত্র কারণ আমি মেয়ে।   মায়ের সেই ছেলে এখন মাসে ২-৩  বার কথা বলে যার সিংহভাগ কথাবার্তায় থাকে দেশে বাড়ি বিক্রির প্রসঙ্গ। মাস খানেক ধরে মা এখন আমার কাছেই থাকেন। কিন্তু উনি যে ভুলভাবে সন্তানদের বড়ো করেছেন, তাদের মধ্যে বৈষম্য  সৃষ্টি করেছেন তা কখনোই স্বীকার করেন না।
রাতে খাবার সময় মা আমার প্লেটে রোস্ট আর খাসির মাংসের পাশাপাশি ডিম তুলে দিলেন। আমি ডিমটা উঠিয়ে রেখে বললাম,
এখন আর ডিম খেতে পারি না, মা। ছোটবেলা থেকে না খেয়ে খেয়ে অভ্যাস হয়ে গেছে।
এখন আবার অভ্যাস কর। সমস্যা কি ?
আমি শুধু মৃদু হাসলাম। মা হঠাৎ বললেন,
আমার উপর তোর অনেক ক্ষোভ,  অনেক অভিমান, তাই না রে?
কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম,
না,  মা! আমি মেনে নিয়েছি সবকিছু।  তবে আমার সন্তানদের তাদের প্রাপ্য হক থেকে বঞ্চিত করবো না। সে ছেলে হোক বা মেয়ে।
আমার মা আমার মাথায় হাত রেখে বললেন,
আমায় মাফ করে দিস, মা। আমি ভুল করেছি।
আমি চেয়ার থেকে উঠে আমার বৃদ্ধা মা কে জড়িয়ে হু হু করে কেঁদে উঠলাম। এতদিন পর যেন শান্তির পরশ ছড়িয়ে পড়লো আমার সারা শরীর জুড়ে।

For Advertisement

Cumillar Voice’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মন্তব্য