সোমবার ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

For Advertisement

একুশে পদক প্রাপ্ত কিংবদন্তি নাট্যকার ও অভিনেতা মমতাজউদদীন আহমদ,  একজন ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শ্রদ্ধেয়।

১৫ জুন, ২০২৪ ১:৩৪:৪৭
একুশে পদক প্রাপ্ত কিংবদন্তি নাট্যকার ও অভিনেতা মমতাজউদদীন আহমদ,  একজন ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শ্রদ্ধেয়।

একুশে পদক প্রাপ্ত কিংবদন্তি নাট্যকার ও অভিনেতা মমতাজউদদীন আহমদ,  একজন ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শ্রদ্ধেয়।
মমতাজউদদীন একজন প্রতিভাদীপ্ত নাট্যকার, অভিনেতা, প্রাবন্ধিক, সংগঠক ও কথক হিসেবে তাঁর পরিচয় দেশ-বিদেশে বিসত্মৃত। আন্তরিকতা, শ্রমনিষ্ঠা, প্রজ্ঞা, স্বদেশপ্রীতি এবং মানবিক মূল্যবোধ তাঁর এ-পরিচিতিকে করেছে অধিক সমৃদ্ধ। সমাজজীবন এবং শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধ বলেই তাঁর নাটকগুলো মৃত্তিকানির্ভর; ভিনদেশি নাটকও রূপান্তরগুণে পেয়েছে মৌলিকতার মর্যাদা।
ব্যক্তিক-সামাজিক-রাষ্ট্রিক সমস্যা কিংবা অবস্থা চিহ্নিতকরণ, বিশেষত ভাষা-আন্দোলন ও স্বাধীনতাভিত্তিক নাট্যরূপায়ণে তিনি কুশলী কারিগর। তাঁর নাটকের চরিত্রগুলো কথা বলে কখনো ধীরলয়ে, কখনো উচ্চস্বরে, কখনো তির্যকভঙ্গিতে, কখনো রসালোভাবে, কখনোবা প্রতীকী ঢঙে। কথার পিঠে কথা সাজিয়ে গঠিত হয় সতেজ নাট্যসংলাপ, রচিত হয় সাহসিক বক্তব্য। নাটকের বাস্তবতায়, অভিনেতার ঋজুতায়, প্রাবন্ধিকের প্রাতিস্বিকতায়, সংগঠকের মমতায় এবং কথকের দৃঢ়তায় মমতাজউদদীন আহমদ উজ্জ্বল আর অকুতোভয় নাট্যজন।
ছাত্র জীবনে তিনি ছাত্র ইউনিয়ন করেছেন, সেই জন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে এক বছর জেল খেটেছেন! একজন নাট্যকার, অভিনেতা, লেখক, রাজনীতিবিদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং পরিপূর্ণ একজন আলোকিত মানুষ। তিনি স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ যিনি এক অঙ্কের নাটক লেখায় বিশেষ পারদর্শিতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। নাটকে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ১৯৯৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
মমতাজউদদীন ১৮ জানুয়ারি ১৯৩৫ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্তর্গত মালদহ জেলার হাবিবপুর থানার আইহো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দেশ বিভাগের পর তার পরিবার তৎকালীন পূর্ববঙ্গে  বর্তমান বাংলাদেশে চলে আসেন। তার পিতার নাম কলিমুদ্দিন আহমদ ও মাতার নাম সখিনা বেগম।
মমতাজউদদীন মালদহ আইহো জুনিয়র স্কুলে চতুর্থ শ্রেণী পর্যস্ত লেখাপড়া করে ১৯৫১ সালে ভোলাহাট রামেশ্বর পাইলট মডেল ইনস্টিটিউশন থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তী কালে রাজশাহী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বি.এ অনার্স ও এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন।
মমতাজউদদীন আহমদ ৩২ বছরের বেশি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কলেজে বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও ইউরোপীয় নাট্যকলায় শিক্ষাদান করেছেন। ১৯৬৪ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের খন্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি ১৯৭৬-৭৮ সালে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়নে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মমতাজউদদীন আহমদ ভারতের দিল্লী, জয়পুর এবং কলকাতায় নাট্যদলের নেতা হিসাবে ভ্রমণ ও নাট্য মঞ্চায়ন করেন। তার লেখা নাটক কি চাহ শঙ্খ চিল এবং রাজা অনুস্বরের পালা রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে তালিকাভুক্ত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকসমূহে নিয়মিত কলামও লিখে থাকেন। এছাড়ও তার বেশ কিছু নাটক, বাংলাদেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
মমতাজউদদীন শিক্ষক ও লেখক হিসেবে পরিচিতি পেলেও থিয়েটারের মাধ্যমে তার কর্মজীবনকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তিনি সংস্কৃতি অঙ্গনের একজন কর্মী হিসেবে সক্রিয়ভাবে বাংলা ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এছাড়াও স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনেও তিনি সক্রিয় ছিলেন। মমতাজউদদীন ১৯৭৭-৮০ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক ছিলেন। ২০১১ সাল থেকে তিনি জাতিসংঘের বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মমতাজউদদীন আহমদ অবিভক্ত বাংলার মালদহ জেলায় জন্মগ্রহণ করলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলায় তার শৈশব অতিবাহিত করেন। ছাত্রাবস্থায়ও তিনি তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে অংশ নেন। রাজশাহীর ভাষা আন্দোলন কর্মী গোলাম আরিফ টিপুর সাথে তিনি রাজশাহীতে ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা পালন করেন। তিনি রাজশাহী কলেজে বাংলাদেশের প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণেও ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৪, ১৯৫৫, ১৯৫৭ ও ১৯৫৮ সালে তিনি রাজনীতির কারণে কারাবরণ করেন।
মমতাজউদদীন  আহমদ ২ জুন ২০১৯ সালে ৮৪ বছর বয়সে ঢাকা  অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন কার্টেসি খন্দকার আশরাফুজ্জামান।

Cumillar Voice’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।


মন্তব্য

সর্বশেষ

For Advertisement

সম্পাদক : কাজী মোঃ সাইফুল ইসলাম
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী ফাতেমা আক্তার বৃষ্টি
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : জাগুরঝুলি বিশ্ব রোড, আদর্শ সদর, কুমিল্লা ৩৫০০.
+880 1710-818277
+880 0161812800
ইমেইল : cumillavoice20@gmail.com

Developed by RL IT BD