মঙ্গলবার ২৯ এপ্রিল, ২০২৫
For Advertisement
ছবিতে যাকে দেখছেন উনি আমার আব্বা, ছোটবেলা থেকেই আমি বাবা-মা থেকে দুরে নানাবাড়ীতেই আমার বেড়ে ওঠা।
২ মে, ২০২৪ ৮:৩০:০৫

ছবিতে যাকে দেখছেন উনি আমার আব্বা, ছোটবেলা থেকেই আমি বাবা-মা থেকে দুরে নানাবাড়ীতেই আমার বেড়ে ওঠা।
ক্লাস টু তে ভর্তি হয়েছিলাম কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তখন থেকেই আমার মা-বাবা বলতে আমি নানিকেই বুঝতাম, আব্বা আর আম্মা মাঝেমধ্যে আমাকে দেখতে আসতেন। আমাদের গ্রামের বাড়িতে ভালো স্কুল ছিলোনা, পাড়া প্রতিবেশি আমার বয়সীদের পড়ালেখায় তেমন আগ্রহ নাই দেখে আমার আম্মা আমাকে দুরে নানিবাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন।
নানিবাড়িতে আমার এক ডজন মামাতো ভাইবোনদের সাথেই আমার বেড়ে ওঠা শুরু হল। নানি আমাকে অনেক আদর করতেন বলেই হয়ত ছোট বেলায় কিছুটা বেয়াড়া ছিলাম। গাছে গাছে চড়ে বেড়াতাম। আমার আগে কোন পাখির পক্ষে পাকা ফল খাওয়া সম্ভব হতনা। আব্বা তখন হাল চাষ করতেন, মানুষের জমিতে কাজ করতেন।
অনেক খাটুনির কাজ, আর আমি নানাবাড়িতে টুকটাক কৃষিকাজে সহায়তা করে পড়ালেখা চালিয়ে যেতাম। ক্লাস ওয়ানে পড়াকালীন একদিন আম্মা পড়ার জন্য আব্বার কাছে বিচার দিয়েছিল। মনে আছে সেদিন আব্বা আমার মাথা চৌকির নিচে ঢুকিয়ে পেছনে এমন মাইর দিয়েছিল আমি আজও ভুলতে পারিনি। পড়ালেখা
নিয়ে মাইর সেই শেষ। আমার জীবনে আর কোনদিন পড়ার জন্য মাইর বা বকা খেতে হয়নি। উল্টা কেন এত সময় ধরে পড়ি তার জন্য অনেকেই টিটকারি মারত। আসলেই ছোটবেলায় আমি মুখস্থ করতে পারতাম কম, তাই অনেক সময় ধরে পড়তে হত। নানাবাড়িতে কোন অনুষ্ঠান হলে অনেকেই আসত আনন্দ করতে, আর আমি চুপচাপ বসে বসে পড়তাম।
দেখা গেছে জোরে মাইকে গান বাজছে আর আমি পাশের রুমে বসে অংক করছি। আমার আব্বা কখনো স্কুলে গিয়েছিল কিনা জিজ্ঞেস করা হয়নি, কিন্তু উনি উনার ছেলে মেয়েদের পড়ালেখায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। আমার মনে আছে আমি যখন এসএসসিতে খুব ভাল রেজাল্ট করলাম তখন আব্বা-আম্মা খুব খুশি হয়েছিলেন।
আমি তখন নটরডেমে ভর্তির স্বপ্ন দেখলাম। আব্বা তখন সাভার ক্যান্টনমেন্টে সবজি সাপ্লাইয়ের কাজ দেখাশোনা করত। আব্বাকে আমার ইচ্ছার কথা বলার সাথে সাথে আব্বা আমাকে নিয়ে গেল মতিঝিলে নটরডেম কলেজ দেখাতে। কিন্তু অনেক হিসাব নিকাশ করে আর ভর্তি হবার সাহস পেলাম না। শুধুমাত্র টিউশনির উপর ভর করে ঢাকায় ভর্তি হবার সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম না।
আমার স্কুলে আমার চেয়ে কম রেজাল্ট করা বন্ধুটাও যখন নটরডেমে ভর্তি হল তখন একরাশ হতাশা নিয়ে বনপাড়া কলেজে ভর্তি হলাম। লজিং থাকলাম ডাঃ মুস্তাফিজুর আংকেলের বাসায়। লজিংয়ের গল্প আরেকদিন বলব। কলেজে এত কঠিন পড়া, তারপর আবার সম্পূর্ণ নতুন বই, নতুন সিলেবাস। আমাদের শিক্ষকগণ নিজেরাই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিল পড়াতে।
এটা দেখে আমি পুরাই হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। আমার বন্ধু নটরডেম কলেজ থেকে আসলে গল্প করত তারা কত সুন্দর করে শিখছে তখন আমি আরো বেশি হতাশ হতাম। টাকার জন্য নটরডেমে পড়তে পারলাম না। কিন্তু আমার আব্বা আমাকে কখনও হতাশ করেনি। যখন যেমন প্রাইভেট পড়ার জন্য টাকা চেয়েছি আব্বা শত কষ্ট হলেও না করেনি।
কখনও বুঝতেও দেয়নি তার কষ্টের কথা। কিন্তু আমি ঠিকই বুঝতাম।আমার অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর রেজাল্ট দেখে আব্বা চোখ বন্ধ করে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে গিয়েছেন। কলেজ পাশ করে মেডিকেল কোচিং করতে ঢাকায় আসলাম, কোচিংয়ে ভর্তি, মেসে থাকা সবকিছুর ব্যবস্থা তিনি করেছেন, কিভাবে করেছেন আমি তখন বুঝিনি কিন্তু পরে বুঝতে পেরেছি।
দিনরাত শ্রম বিক্রি করেছেন, হয়ত অন্যের কাছে হাতও পেতেছিলেন তখন, তবুও আমাকে বুঝতে দেয়নি। জীবনে কখনো না করেনি আমাকে, তবে আমি তার সামর্থ্য বুঝতাম, যতটুকু না নিলেই নয় ঠিক ততটুকুই নিতাম। তাই যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম তখন আমি আর আব্বার কাছ থেকে পারত পক্ষে টাকা নিতাম না।
আজ আমি এবং আমার স্ত্রী বেতন ভাতা দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ ভাল টাকা আয় করি। নিজেদের জন্য , পরিবারের জন্য, আত্বীয়স্বজনের জন্য, আশপাশের অসহায় মানুষদের জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করি, কিন্তু তারপরও মনে হয় এই মানুষদের মত উদার হতে পারিনি এখনও।
সেই ছোট্টবেলা থেকেই আব্বা আমাকে স্বাধীনতা দিয়েছে, আমি আমার মত সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাই সেই ঋণ থেকেই আব্বাকে আমরা স্বাধীনতা দিয়েছি, যখন যেদিকে যেতে চায় যেতে দেই, যেখানে থাকতে চায় থাকতে দেই। আল্লাহর রহমতে ওমরা করিয়েছি , সামনে হজ্জ করানোর ইচ্ছা আছে। কিন্তু মনে হয় এই মানুষদের মত এতটা উদার আর সেক্রিফাইস কি আমরা করতে পারছি? মনে হয় পারছিনা। এমন বাবার সন্তান হতে পেরে আমি গর্বিত। উনার ঝরানো প্রতিটি ফোটা ঘামের মূল্য আমি দিতে চাই অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে।
কয়েকদিন আগে রাজবাড়ী আমার কর্মস্থলে এসেছিলেন বেড়াতে , পুলিশ সুপারের কার্যালয়, রাজবাড়ীতে। একটা স্মৃতি রেখে দিলাম আব্বার সাথে। হয়ত আগামি বছর আমি থাকবনা এই কার্যালয়ে , আব্বারও হয়ত আর আসা হবেনা। তাই স্মৃতি রেখেদিলাম ফেসবুক ওয়ালে। বেচে থাকলে আগামি বছর ফেসবুক মনে করিয়ে দিবে।
Cumillar Voice’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
সর্বশেষ
For Advertisement
সম্পাদক : কাজী মোঃ সাইফুল ইসলাম
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী ফাতেমা আক্তার বৃষ্টি
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : জাগুরঝুলি বিশ্ব রোড, আদর্শ সদর, কুমিল্লা ৩৫০০.
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী ফাতেমা আক্তার বৃষ্টি
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : জাগুরঝুলি বিশ্ব রোড, আদর্শ সদর, কুমিল্লা ৩৫০০.
+880 1710-818277
+880 0161812800
ইমেইল : cumillavoice20@gmail.com
+880 0161812800
ইমেইল : cumillavoice20@gmail.com
Developed by RL IT BD
মন্তব্য