রবিবার ২০ এপ্রিল, ২০২৫

For Advertisement

জীবন পথে দেখা বৈচিত্রময় নানা অধ্যায়ে চলি জীবনের পথে, কতজনেরই সাথে হয় দেখা, কেউ কেউ স্মারক হন আন্তরিকতায়। 

২৬ মার্চ, ২০২৪ ৩:৫৮:২৫
জীবন পথে দেখা বৈচিত্রময় নানা অধ্যায়ে চলি জীবনের পথে, কতজনেরই সাথে হয় দেখা, কেউ কেউ স্মারক হন আন্তরিকতায়। 

জীবন পথে দেখা বৈচিত্রময় নানা অধ্যায়ে চলি জীবনের পথে, কতজনেরই সাথে হয় দেখা, কেউ কেউ স্মারক হন আন্তরিকতায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রবীণ ব্যক্তিত্ব শ্রদ্ধেয় আলহাজ্ব হারুন আল রশিদ। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৫ বারের মাননীয় এমপি ছিলেন , ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী, রেডক্রিসেন্ট এর প্রধান সহ নানা দেশের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সন্তান হিসেবে তিনি ছিলেন স্বনাধন্য এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যকেও বিকশিত করেছেন।
বাসা থেকে বের হয়ে কর্মস্থলে আসার পথে প্রায়শই দেখা হয়। তিনি মৌলভীপাড়ায় থাকেন, প্রবীণ এই মানুষটি বাড়ি থেকে অদূরে মসজিদে এখনও পায়ে হেঁটে বের হন নামাজ আদায় করতে। মোটর সাইকেলে যাচ্ছিলাম, চোখে চোখ পড়লো, মুখে মিস্টি হাসি। দাঁড়ালাম, কাছে যেতেই আমার নাম ধরে বল্লেন , কি সাংবাদিক কেমুন আছো? বল্লাম, আপনি কেমন আছেন, “আর আছি, দোয়া কইরো। কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না।
তিনিই বল্লেন, এখন কি করতাছো? কোন পত্রিকাত কাম কর, বেতন টেতন কেমুন পাও?  আমি অতি সাধারণ একজন , অথচ পথে দাঁড় করিয়ে এই প্রবীণ ব্যক্তিত্ব আমার খোজ খবর নিচ্ছেন এই আন্তরিকতা দেখে মনটা উনার প্রতি শ্রদ্ধায় ভরে গেল। হারুণ ভাই যখন ক্ষমতায় ছিলেন তেমন ঘন সম্পর্ক ছিলো না, তেমন কোন কথা হতো না, কোন প্রয়োজনে উনার কাছে যাইও নি, সংবাদ মাধ্যমের প্রয়োজন ছাড়া।
রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলাম না, আমি উনার দলও করিনি। অথবা ঘনিষ্ঠ কোন আত্মীয়ও নই। অথচ উনি যে ভাবে আমার প্রতি আন্তরিকতা দেখালেন তাতে আমি অভিভূত। উনার সাথে সাক্ষাতের কিছু ঘটনা মনে পড়লো,  বিভিন্ন সময় সংবাদ সম্মেলনে নানা প্রশ্ন করে উনাকে বিরক্ত করেছি। আমার প্রশ্নে কয়েকবার রেগেও গেছেন। সে সব ভেবে ভাবতাম তিনি বোধ হয় আমাকে তেমন পছন্দ করেন না। ভাবনাটা আমার ভুল।
তিনি আমাকে মনে রেখেছেন । একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে উনার দায়িত্ব তিনি আজও পালন করলেন। এসব ভাবছিলাম,  তিনি আবারো বল্লেন , তোমার  পত্রিকাটি আছে তো, পত্রিকা বের করে রোজগার কি হয় । উনার প্রশ্ন গুলো শুনে কোন উত্তর দিতে পারছিনা। শুধু বল্লাম ভাল আছি। খুশী হলেন, দুজনে একটি ছবিও তুললাম।
যাবার সময় বল্লেন , খোজ খবর রাইখ্যো। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৌলবীপাড়ার হারুন ভাইয়ের বাসা আসা যাওয়ার পথে দেখেছি ,কত মানুষের ভীর, হারুন ভাইয়ের সাক্ষতের জন্য কতজনই অপেক্ষা করে, কখণ তিনি আসবেন, আর এখন এ বাসটি নীরব।
পড়ন্ত বয়সে অনেকটা একাকীত্বেই জীবন কাটান হারুন ভাই। ফেরার পথে হারুণ ভাইয়ের সাথে নানা স্মৃতি মনে পড়ছে ।  আলহাজ্ব হারুন আল রশীদ সংস্কৃতিমনা একজন মানুষ চিলেন তা তেমন জানতাম না। ১৯৯০ সালে বিটিভিতে আমাকে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন প্রয়াত ওস্তাদ খুরশিদ খান, একবার হারুণ ভাইয়ের সাথে তিনি দেখা করেছিলেন সঙ্গে ছিলাম ।
পরে খুরশিদ মামার কাছে জানতে পেরেছি উনার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের কথা। হারুন ভাই  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন সঙ্গীত সংসদের সাধারন সম্পাদক ছিলেন। উনার পরিবারের অনেকেই সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন। উনাদের পরিবারের হেলেনা আপাও ছিলেন সংস্কৃতি সেবী।
সংস্কৃতি আর সম্প্রীতির একটি বড় অংশ হচ্ছে এক অপরের খোঁজ খবর নেয়া সেই কাজটি এখনও করেন শ্রদ্ধেয় হারুন ভাই। অথচ ব্রাহ্মণভাড়িয়ার সংস্কৃতি অঙ্গনের হাতে গোনা কিছু মানুষ আমরা একে অপরের খোজ খবর নেই না। কে কেমন আছে। কি করছে। অনৈক্য আর একে অপরের প্রতি হিংসা বিদ্বেশের নানা ঘটনা মনকে পীড়া দেয়।
হারুণ ভাইয়ের সঙ্গে এর আগে কয়েকবার দেখা হয়েছে এ পথেই , ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আরেকজন তারকা ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা গণ মানুষের নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আলহাজ্ব এডভোকেট হুমায়ুন কবীরের মৃত্যুর পর হারুন ভাইয়ের ইন্টারভিউ নিতে গিয়েছিলাম , তিন বলেছিলেন, হুমায়ুন এর মৃত্যুতে হুমায়ূন যুগ হারিয়েছে,  হুমায়ূন ছিলেন গণ মানুষের নেতা । হারুন ভাই যখন মন্ত্রী তখন আশুগঞ্জে একটি শালিশী সভায় এড. হুমায়ুন কবীরের সহযাত্রী ছিরাম সেই শালিস সভায় সভাপতি হারুন ভাই, সভা শূরতে বলেছিলেন , শালিস টালিস বুঝে হুমায়ুন আমি তত বুঝিনা, এই শালিশ সভা করবে হুমায়ূনই।
দুজনের ভিন্ন ধারার রাজনৈতিক চর্চা থাকলেও একে অপরের প্রতি সম্প্রীতি আর মর্যাদা দেয়ার  সর্ম্পকটা ফুটিয়ে তুলেছিলেন সেদিন হারুণ ভাই, বলেছিলেন , হুমায়ুনের পত্রিকায় আছো তো? কোথায় কি করি খোঁজ রাখেন  হারুন ভাই এই ভেবে সেদিন খুব খুশী হয়েছিলাম। আবারো একদিন দেখা হয় এ পথেই। কথা বলছিলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আরেক তারকা বিজ্ঞ আইনজীবি শ্রদ্ধেয় এ্যাডভোকেট একে সামসুদ্দিন মহোদয়ের সঙ্গে। মৌলভীপাড়া মসজিদ থেকে বের হয়ে হারুন ভাই দাঁড়ালেন আমাদের পাশে, সামসুদ্দিন সাহেব আর হারুন ভাই বয়সে কাছাকাছি , একজন আরেকজনের স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নিলেন।
দুজনের আন্তরিকতা দেখে শিক্ষা পেয়েছি সম্প্রীতির সৌহার্দের। ঐতিহ্যবাহী তিতাস পাড়ের এই ব্রাহ্মণবাড়িয়া । এখানে জন্ম নেয়া গুনীজন নানা কর্মগুণেই ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে বিকশিত করেছেন। ক্ষণ জীবনে তাঁদের অবদান অনেক। এমনই এক তারকা আলহাজ্ব হারুন আল রশীদ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাহিত্য সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অনেক গুণী মানুষই চলে গেছেন না ফেরার দেশে কিন্তু তাঁদের অবদান স্মরনীয় করে রেখে গেছেন।
হারুণ ভাইদের মতো গুণীজন হারিয়ে গেলে আরেকটা হারুন ভাই নতুন প্রজন্ম পাবে কিনা তা জানা নেই। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্য সৌহার্দ সম্প্রীতি বিকাশে হারুন ভাইদের মানুষের প্রয়াজনীয়তার গুরুত্ব অনেক। এই ভাবনাই মনে প্রতিধ্বনীতে হয়েছে। হারুন ভাই দীর্ঘজীবি হোন, উনার প্রতি প্রগাঢ় শ্রদ্ধা।

Cumillar Voice’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।


মন্তব্য

সর্বশেষ

For Advertisement

সম্পাদক : কাজী মোঃ সাইফুল ইসলাম
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী ফাতেমা আক্তার বৃষ্টি
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : জাগুরঝুলি বিশ্ব রোড, আদর্শ সদর, কুমিল্লা ৩৫০০.
+880 1710-818277
+880 0161812800
ইমেইল : cumillavoice20@gmail.com

Developed by RL IT BD