For Advertisement
ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুপাতে চোখের পলকেই ভস্ম হয়ে যাওয়া রোমান ঐতিহ্যের ‘পম্পেই’ নগরী।
৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২৪:১৮
ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুপাতে চোখের পলকেই ভস্ম হয়ে যাওয়া রোমান ঐতিহ্যের 'পম্পেই’ নগরী।
ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুপাতে চোখের পলকেই ভস্ম হয়ে যাওয়া রোমান ঐতিহ্যের ‘পম্পেই’ নগরী।
ইতালির কাম্পানিয়া অঞ্চলে মাউন্ট ভিসুভিয়াসের কোল ঘেষে গড়ে উঠেছিল রোমান সাম্রাজ্যের প্রাচীন নগরী পম্পেই। প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যের নগরী হিসেবেই পম্পেই পরিচিতি লাভ করে। নগরীর অবস্থান দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলে হওয়ায়, প্রায়ই এখানে ভূমিকম্প হানা দিত। ০০৬২ সালের শক্তিশালী ভূমিকম্পে পম্পেই কেঁপে উঠে। এর ধাক্কা সামলে না উঠতেই নেমে আসে চূড়ান্ত বিপর্যয়। জেগে ওঠে আগ্নেয়গিরি ‘ভিসুভিয়াস’। ভিসুভিয়াসের আগুন ও উত্তপ্ত লাভায় মাত্র ১৮ ঘণ্টায় পুরো পম্পেই ঢেকে গিয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। বুঝে উঠার আগেই থেমে যায় প্রতিটি প্রাণের স্পন্দন।
০০৭৯ সালের কথা, প্রতিদিনের মতোই সেদিনও নগরী কর্মচঞ্চল। বিরামহীন ব্যস্ততা আর লোক সরাগমে মুখরিত পম্পেইর আনাচে কানাচ। বাসায় গৃহিণী ও দাসদাসিরা নিজ কাজে ব্যস্ত। সরাইখানাগুলোতেও মানুষের ভিড়। সৈন্যরা যুদ্ধের অনুশীলন করছে। হটাৎই বিস্ফোরণে দীর্ঘদিন সুপ্ত থাকা ভিসুভিয়াস ভয়ংকর রূপে জেগে উঠে।
আগ্নেয়শিলা, উত্তপ্ত লাভা ও আগ্নেয় গ্যাসের মেঘ প্রায় ৩৩ কিমি উচুতে ছড়িয়ে যায়। মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় নগরী। ধারণা করা হয় পম্পেই ও হার্কুলেনিয়ামে ১৬,০০০-২০,০০০ মানুষের বাস ছিল। যারা বাড়িতে ছিলেন তারা বাড়িতে আটকা পরে মারা যায়। আগুনের তাপে সাথে সাথে মারা যায় রাস্তার অনেকে। যে যেভাবেই ছিল সেভাবেই তার মৃত্যু হয়। আগ্নেয়গিরির বিকট শব্দে মিলিয়ে যায় অসহায় মানুষের আর্তচিৎকার।
পম্পেই দীর্ঘদিন ২০ফুট ছাইয়ের নিচে ঢাকা পড়ে ছিল। ১৮৬৩ সালে আবিষ্কৃত হয় নগরীর ধ্বংসাবশেষ ও নগরবাসীর দেহাবশেষ। দেহগুলো পাথরে পরিণত। এদের মাংসপেশি গলে গেছে, পুড়ে গেছে ফুসফুস। বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের শ্রমের পর দেহগুলো গবেষণার উপযোগী হয়ে ওঠে। উঠে আসে ২০০০ বছরের প্রাচীন জনপদের দেহের আকৃতি ও মৃত্যুর করুণ ইতিহাস।
দেহাবশেষগুলো পাওয়া যায় দলবদ্ধ ভাবে। ধারণা যে, তারা একে অপরকে সাহায্য করতে চেয়েছে। কিন্তু ভয়ংকর মৃত্যুর কাছে সবাইকেই পরাজিত হতে হয়। এখন পর্যন্ত ১১৫০টি দেহাবশেষ পাওয়া গেছে। তবে মৃতদেহের সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি।
পম্পেই নগরীর স্থাপনার মোজাইক থেকে জানা যায়, এখানকার মানুষ ওয়াইন খুব পছন্দ করতো। নগরীতে জুয়া খেলা নিষিদ্ধ হলেও কঠোর আইন না থাকায় মানুষ সেভাবে মানতো না। পম্পেই ছিল জাঁকজমকপূর্ণ। এর পাথরের অ্যাম্ফিথিয়েটার বিশ্বের অন্যতম স্থাপনা। অ্যাম্ফিথিয়েটার ছিল ইতালির বিখ্যাত আবিষ্কার।
এ থিয়েটারে যেকোনো কর্নারে বসেই ভালোভাবেই খেলা বা লড়াই উপভোগ করা যেতো। বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ এখানে বাণিজ্য করতে আসতো। রোম, প্রাচীন গ্রীকসহ বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী, নাবিকদের ছিল অবাধ চলাচল। কথিত, এই ব্যবসায়ীদের মনোরঞ্জনের জন্য অনেক পতিতালয় স্থাপিত হয়েছিল।
পম্পেই নগরীতে পানি ও ড্রেনেজের সুব্যবস্থা ছিল। বিশ্বের প্রাচীনতম অভিজাত জনপদগুলোর একটি ছিল এ পম্পেই নগরী। রোমান আর গ্রিক বণিকদের ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল কেন্দ্র ছিল এই পম্পেই। ব্যবসা ছাড়াও পম্পেই বিখ্যাত ছিল গ্যালাডিটরিয়াম স্টেডিয়ামের জন্য। এখানে দুজন লোককে ছেড়ে দেওয়া হতো লড়াইয়ের জন্য। যে বেঁচে থাকত সে মুক্তি পেত। এই নিষ্ঠুর খেলা দেখতে দেশ বিদেশের মানুষের সমাগম হতো।
সারনো নদীর গতিপথ পরিবর্তন করতে গিয়ে এর সন্ধান পান ডমিনিক ফোন্তানা। তারপর ১৮৬৩ সালে ছাইয়ের ভেতর থেকে আবিষ্কার হয় নগরীর বাসিন্দাদের দেহাবশেষ। কয়েকদিন পর আগ্নেয়গিরি লাভা শক্ত হয়ে গেলেও ভেতরে থাকা দেহগুলো ধীরে ধীরে পচতে শুরু করে। পুরোপুরি পচে যাওয়ার পর সেখানে তৈরি হয় বাতাস ও হাড় মিশ্রিত জায়গা। সে দেহাবশেষগুলো এয়ারপকেট আকারে থাকায় তা নিয়ে গবেষণা সম্ভব ছিল না।
তাই বিজ্ঞানীরা সেই ফাকা জায়গাগুলো প্লাস্টার দিয়ে পূর্ণ করেন। ৪৮ ঘণ্টা পর সেই প্লাস্টার শুকিয়ে গেলে বেড়িয়ে আসে ২০০০ বছর আগের সেই নগরীর মানুষের আকৃতি। বডিগুলোকে স্ক্যানিং করে আরও বিস্তারিত জানা যায়। এমনকি হাড়গুলোর এক্স-রেও করা হয়। ডিএনএ টেস্টে তাদের বয়স ও লিঙ্গ সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়।
১৯৭৭ সালে ইউনেস্কোর “বিশ্ব ঐতিহ্য” হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে পম্পেই নগরী। গত তিনশ’ বছর ধরে পম্পেই নগরীর ভগ্নাবশেষে চলছে খনন এবং অনুসন্ধান। হয়তো এখনও অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে এ ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাচীন নগরীতে যা ভবিষ্যতে জনসমক্ষে বেরিয়ে আসবে।
ছবি: বর্তমান পম্পেই নগরী, পিছনে ভিসুভিয়াস।
For Advertisement
Cumillar Voice’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
© Cumillar Voice ২০২৪ - Developed by RL IT BD
মন্তব্য