সোমবার ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

For Advertisement

হায়রে প্রবাসীর দুঃখের জীবন।

১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ৯:২০:০৭
হায়রে প্রবাসীর দুঃখের জীবন।

হায়রে প্রবাসীর দুঃখের জীবন মা বাবা যখন ফোন করে বললো আমার ছোট ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে এই মাসের ১৫তারিখ বিয়ে তখন আমার অনেকটা কষ্ট লাগছিলো কিন্তু মনের ব্যাথাটা কেউ বুঝলো না।

আমি বড় ভাই অথচ আমায় রেখে বাবা মা আমার ছোট ভাইয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। পরক্ষণেই মনে হলো আমি দেশের বাহিরে যেহেতু তাই বাবা মা আমার বিয়ের কথা ভাবে নি। আমি যখন দেশে চলে যাবো তখন আমার বিয়ের কথা ঠিকিই ভাববে। ছোট ভাইকে ফোন দিয়ে বললাম, তোর আর তোর হবু বউয়ের বিয়েতে যা যা লাগে আমায় বলিস আমি টাকা পাঠিয়ে দিবো। ছোট ভাইয়ের বিয়েতে আমি মেয়ের গহনা বাবদ দুইলাখ টাকা পাঠিয়েছিলাম কিন্ত ছোট ভাই তবুও বললো আরো যেন ৫০হাজার টাকা পাঠাই।ওর হবু বউয়ের নাকি খুব শখ মাথায় সোনার টিকলি দেওয়ার।আমি তখন আরো ৫০ হাজার টাকা পাঠাই।

আমি খুব অবাক হয়ে খেয়াল করতাম আমার পরিবারের লোকজন আমায় যখন ফোন দিতো তখন আমি কেমন আছি সেটা প্রথমে জিজ্ঞেস না করে জিজ্ঞেস করতো আমি কবে টাকা পাঠাবো তার এটা লাগবে ওর ওটা লাগবে।প্রথম প্রথম খুব খারাপ লাগতো কিন্তু তারপর মনে হলো আমি পরিবারের বড় সন্তান। আমার কাছে চাইবে না তো কার কাছে চাইবে। আমার পরিবারের লোকজন কষ্ট করে টাকা খরচ করে আমায় বিদেশ পাঠিয়েছে। কিন্তু এখন আমি যদি আমার পরিবারের লোকের চাহিদা না পূরণ করি তাহলে সেটা অন্যায় হবে। আমার ভাই বোন মা বাবা যখন যেটা আবদার করতো আমি আমার সর্বচ্চো চেষ্টা করতাম সেটা পূরণ করার জন্য।

দীর্ঘ ৯বছর প্রবাস জীবন পার করার পর বাবাকে যখন ফোনে বললাম, বাবা, আমি দেশে আসতে চাই বাবা অবাক হয়ে আমায় বললো, দেশে এসে কি করবি। আমি বললাম, দেশেই কিছু একটা করার চেষ্টা করবো। তোমাদের ছাড়া আমার একা একা থাকতে ভালো লাগে না।তাছাড়া ছোট ভাই বোনের বিয়ে হলো কিন্তু আমি বিয়েতে থাকতে পারলাম না।খুব ইচ্ছে করছে ওদের দেখতে বাবা তখন কিছুটা রেগে বললো, দেখতে ইচ্ছে হলে মোবাইলে ভিডিও কলে দেখিস। তবুও দেশে আসতে হবে না। তাছাড়া আমি নতুন বাড়ি বানানোর কাজে হাত দিয়েছি। এখন তুই দেশে আসলে টাকা পাঠাবে কে। বাবার কথা শুনে এই মূহুর্তে নিজেকে মানুষ না, টাকা বানানোর যন্ত্র মনে হচ্ছিলো।মানুষ ঠিকিই বলে, প্রবাসীদের ওর পরিবারের লোকজন টাকা বানানোর মিশিন বাদে অন্য কিছু ভাবে না।

আমি এর কয়েকমাস পর পরিবারের কাউকে কিছু না বলে হুট করে দেশে এসে পরলাম। আমি দেশে এসেছি বলে আমার পরিবারের লোকজন খুশি হওয়ার চেয়ে মনে হয় কষ্ট পেয়েছে বেশি। ৯বছর পর আমি দেশে এসেছি কোথায় বাবা আমায় বুকে জড়িয়ে ধরবে তা না, বাবা আমার থেকে দূরে বসে আছে। ছোট বোন রাগ করে বসে আছে আমি কেন ওর স্বামীর জন্য রোলেক্স ঘড়ি না এনে অন্য ঘড়ি এনেছি। আমি ওরে বললাম, যে ঘড়িটা এনেছি সেটাও অনেক ভালো। ছোট বোন রাগে ঘড়িটা হাত থেকে ফেলে দিয়ে বললো,
আমার স্বামীর লাগবে না এই ঘড়ি। তোমার ভালো ঘড়ি তুমি হাতে দিয়ে বসে থাকো।”ছোট বোন একটা ঘড়ির জন্য আমার সাথে রাগ করছে অথচ ছোট বোন যখন যা আবদার করেছে সব আমি পূরণ করেছি

ছোট ভাই রাগ করেছে আমি কেন ওর বউয়ের জন্য আইফোন নিয়ে আসি নি। ছোট ভাইকে যখন বললাম, ভাইরে, আমার বেতনের চেয়ে একটা আইফোনের দাম বেশি। তাছাড়া তোকে তো একটা আইফোন দিয়েছি ছোটভাই রেগে গিয়ে বললো, আমার বউয়ের জন্য তোমার কাছে কি এমন চেয়েছি যে দিতে পারলে না? লাগবে না আমার বউকে তোমার কিছু দেওয়া এইকথা বলে ছোটভাই রাগ করে চলে গেলো অথচ ছোট ভাই কত সহজে ভুলে গেলো ওর বিয়েতে ওর বউয়ের সমস্ত গহনা আমি দিয়েছি।

বাড়ি আসার পর থেকে প্রতিদিন আমাদের দোকানে গিয়ে বসতাম। একদিন বাবা আমায় হুট করে ডেকে বললো, তুই বিদেশ যাবি কবে। আমি মাথা নিচু করে বললাম, আমি তো আর যাবো না। তোমায় তো বলেছিলাম আমি দেশেই কিছু একটা করবো। বাবা রেগে গিয়ে বললো, দেশে থেকে কি এমন করবি শুনি আমি বললাম, আমাদের ব্যবসাটা আরো বড় করবো। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট ভাই অবাক হয়ে বললো, আমাদের ব্যবসা মানে? দোকান তো আমার।” আমি তখন বললাম, কিন্তু দোকান করতে সব টাকা তো আমি দিয়েছি।৷ ছোট ভাই সরাসরি অস্বীকার করে বললো আমি নাকি কোন টাকা দেই নি। আমি যেনো তার দোকানে আর না বসি। ছোট ভাইয়ের কথাতে যতখানি না কষ্ট পেয়েছি তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি বাবার কথা শুনে। বাবা যখন বললো, ও তো ঠিকিই বলেছে। তুই আর ওর দোকানে বসিস না। পারলে নিজে দোকান দে।

আমি আর কিছু এই বিষয়ে না বলে বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম, আমি নতুন করেই ব্যবসা করবো টাকা দাও আমায়। বাবা সোজাসাপ্টা বলে দিলো উনার কাছে কোন টাকা নেই। আমি যে ৯টা বছর গাধার খাটুনি খেটে এতো এতো টাকা পাঠিয়েছিলাম সেই টাকা নাকি খাওয়া-পড়াতেই সব খরচ হয়ে গেছে। আমি টাকায় কিনা সকল জমি-জমা ভাই বোনের নামে। আমার নামে কোন সম্পত্তি নেই। ছোট ভাইকে যখন বললাম, কিছু জমি বিক্রি করে অন্তত আমায় কিছু টাকা দিতে। ছোট ভাইয়ের সোজা উত্তর তার ভাগ থেকে এক টুকরো জমিও সে বিক্রি করবে না। ছোট বোনের কাছে যখন কিছু টাকা ধার হিসাবে চাইলাম সেও দিতে রাজি হলো না।

নিজের জন্মদাতা পিতা আর নিজের রক্তের ভাই বোনের থেকে এমন ব্যবহার দেখেও আমি কাঁদতে পারতাম না অথচ আমার ভিতরটা প্রতিনিয়ত ক্ষত বিক্ষত হতো। আমি যা বুঝার বুঝে গিয়েছিলাম।তাই যেদিন দেশ ছেড়ে চলে যাবো সেদিন আমার পরিবারের লোকদের বললাম।

তোমারা হয়তো মনে মনে ভাবো বিদেশে টাকা পয়সা রাস্তায় পরে থাকে। কিন্তু বিশ্বাস করো বিদেশে টাকা ইনকাম করা কত কষ্টের সেটা একজন প্রবাসী ছাড়া অন্য কেউ বুঝবে না। ১৮ ঘন্টা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে বাসায় এসে নিজে রান্না করে খেয়েছি। যে আমি কিনা ৫কেজি ওজনের কিছু মাথায় নিতে পারতাম না সেই আমি ৫০ কেজি ওজনের সিমেন্টের বস্তা মাথায় নিয়ে এক তলা থেকে আরেক তলায় গিয়েছি। তোমাদের জন্য এতকিছু করেও তোমাদের মন পেলাম না। আমি বেঁচে থাকতে এই দেশে কখনো পা রাখবো না। আর যদি মরে যায় তহলে আমার লাশটা যেন বিদেশেই পরে থাকে তোমরা সেটা আর দেশে ফিরিয়ে এনো না।

পরম শিক্ষা:
ব্যথিত জীবন শুধুই বেদনার। জীবনকে নিজের মতো করে সাজিয়ে তোলাই উত্তম। নিজের সাধ্য অনুযায়ী জীবনকে নিজের মতো করে গড়তে হবে। তবে তার মধ্যে বাবা_মা ও পরিবার প্রাধান্য পেলেও পরিশ্রম ও জীবনের ত্যাগ টা স্বাদ ও স্বাধ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিৎ। মনে রাখতে হবে অর্থ, খ্যাতি আর সম্পদের মোহই জীবন নয়।> প্রবাসী টাকার মেশিন প্রবাসী ও হায়রে দুঃখে ভরা প্রবাসিরজীবন কেউ বুঝলো না প্রবাসীর কত কষ্টের জীবন।

Cumillar Voice’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।


মন্তব্য

সর্বশেষ

For Advertisement

সম্পাদক : কাজী মোঃ সাইফুল ইসলাম
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী ফাতেমা আক্তার বৃষ্টি
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : জাগুরঝুলি বিশ্ব রোড, আদর্শ সদর, কুমিল্লা ৩৫০০.
+880 1710-818277
+880 0161812800
ইমেইল : cumillavoice20@gmail.com

Developed by RL IT BD