মঙ্গলবার ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

For Advertisement

হাসপাতালের রুমে ঢুকেই মা বাবার গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো। ডাক্তার-নার্স এমনকি আমিও চমকে গেলাম।

৪ মে, ২০২৪ ৬:৫৯:০২
হাসপাতালের রুমে ঢুকেই মা বাবার গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো। ডাক্তার-নার্স এমনকি আমিও চমকে গেলাম।

হাসপাতালের রুমে ঢুকেই মা বাবার গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো। ডাক্তার-নার্স এমনকি আমিও চমকে গেলাম।
তুমি থাকতে চারু’র এ্যাকসিডেন্ট হলো কীভাবে?’আসলে টার্ন নিতে গিয়ে বাইক থেকে পরে গেছে আর আমিও বুঝতে পারিনি।’তোমার মতো দায়িত্বহীন মানুষের কাছে চারুর দায়িত্ব দেওয়াটাই আমার ভুল হয়ে গেছে।’
মিতু, তুমি নিজে ওকে আমার কাছে ফেলে রেখে চলে গেছ তোমার ক্যারিয়ার গড়তে।’শোন, আমার জন্যই সে আজ এত বড় স্কুলে পড়তে পারছে। তুমি পারতে ওত দামি স্কুল অ্যাফোর্ড করতে?’এটা তোমার ধারনা। শিক্ষা দামি-কমদামি হয় না। সে একই জিনিস শিখত কিন্তু বাংলায়। তুমি তার পড়াশোনার দায়িত্ব নিতে চেয়েছো আমি না করিনি কারণ তুমি তার মা।  কিন্তু আমাকে সবার সামনে কোন অধিকারে থা’প্পড় মারলে?’
কারণ আমি এখনো তোমার স্ত্রী, আমাদের এখনো ডিভোর্স হয়নি।’
ওহ, ধন্যবাদ। ভুলে গিয়েছিলাম। এই নাও আরো মারো।’বাবার এই কথা শুনে আমি হেসে ফেললাম। বাবাও আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। কিন্তু মা রাগে গজগজ করছে। মা বললো,চারু, এখন থেকে তুই আমার সাথে থাকবি। এখনি আমার গাড়িতে করে তোর বাবার বাসায় গিয়ে তোর সব জিনিস নিয়ে আসবি। চল আমার সাথে।’
আমি বাবার দিকে তাকালাম। বাবা হ্যাঁ’ সূচক ঘাড় নাড়লেন। আমিও খুশি হয়ে গেলাম খুব। মা বিশাল বড় একটা অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন। সম্পূর্ণ তার নিজের। আর খাবার তো চাইনিজ-ইতালিয়ান ছাড়া কথাই নেই। খুব মজা হবে সেখানে। কিন্তু বাবার জন্যও খারাপ লাগছে, বাসায় একা কী করে থাকবে।সে যাই হোক। আমি আমার সব জিনিস নিয়ে মায়ের সেই বিশাল বড় বাড়িতে চলে আসলাম। আমাকে একটা বিশাল বড় রুম দিল। আমার খুব ভালো লাগছে। পরের দিন সকালে দেখি মা অফিসের জন্য বের হয়ে যাচ্ছে, আমাকে বললো।
চারু, ফ্রিজে ব্রেড আর জ্যাম আছে খেয়ে নিস। আর এই নে, এই টাকা দিয়ে দুপুরে তোর যা ভালো লাগে খেয়ে নিস। আমি গেলাম।’ব্রেড আর জ্যাম! এর থেকে তো বাবার হাতের লুচি অনেক ভালো আছে। কিন্তু মা আমাকে একবেলা খাওয়ার জন্য পাঁচশ টাকা দিয়ে গেল ভাবতেই কেমন মজা লাগছে। অনেক রাতে মা বাসায় ফিরলো। মাকে বললাম ক্ষুধা পেয়েছে। মা বললো।
তোর যা মন চায় অর্ডার কর।’কিন্তু আবার সেই বাইরের খাবার?’তো? আমি এখন রান্না করব নাকি! দেখ এমনিতেই অনেক ক্লান্ত আর বেশি বকিস না।’আমি না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম। মা কিছু বললও না। অথচ বাবা কখনো আমাকে না খেয়ে ঘুমোতে দেয়না।সকালে আবার সেই জ্যাম-পাউরুটি। মা আমার হাতে টাকা দিয়ে চলে গেলেন। আমি স্কুলের টিফিন টাইমে চলে গেলাম বাবার অফিসে। কিছু কথাবার্তা বললাম, কেমন আছি না আছি। এরপর বললাম,
বাবা টিফিনে কী এনেছো?’
খিচুড়ি আর মুরগি। খাবি? আয় খাইয়ে দিই।’
সেখানে বাবার সাথে খাওয়া করে আমি আবার স্কুলে ফিরে গেলাম। বিকালে বাসায় ফিরতেই দেখি মা আমার উপর খুব রেগে আছে।চারু, তুই আমাকে না বলে তোর বাবার অফিসে গিয়েছিলি?’হ্যাঁ, কিন্তু এতে রাগার কী আছে? বাবা তো কখনো আমাকে তোমার সাথে দেখা করতে বাধা দেয় নি।’
এরপর থেকে গেলে আমার অনুমতি নিয়ে মেতে হবে।’আচ্ছা।’
পরেরদিন আমি আবার গেলাম বাবার অফিসে। চলে আসার সময় বাবা মায়ের জন্য একটা টিফিন বক্স দিয়ে বললো,
এটা তোর মায়ের জন্য।’
বকা দেয় যদি?’আরেহ দিবেনা।:তুই শুধু বলবি বাবা দিয়েছে।’আচ্ছা।’বিকেলে মা আসলে মাকে বললাম,
তোমার জন্য বাবা কিছু দিয়ে পাঠিয়েছে।’কোথায়? দেখি।’
আমি টিফিন বক্সটি নিয়ে আসলাম। মা খুলে দেখে মায়ের সব প্রিয় খাবার। মা কিছু না বলে একটি প্লেট নিয়ে চুপচাপ খাওয়া শুরু করলো। খেতে খেতে মা যেন কোথায় হারিয়ে গেল, মনে মনে হাসতে লাগলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম কেন হাসছে। বললো,
তোর বাবার কিছু মজার ঘটনা মনে পড়ল।’মিস করো বাবাকে?’
হুম, করি তো।’তাহলে আলাদা থাকো কেন?।
শোন, কোন সম্পর্কে তিক্ততা আসার আগেই ভালো ভাবে সড়ে আসা ভালো। তার স্বপ্ন আর আমার স্বপ্ন অনেক আলাদা, মতের অনেক অমিল। দুজনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিয়েই আমরা আলাদা থাকছি।’
কখনো ইচ্ছা করে না সবাই একসাথে থাকার?’
হয়তো করে!’পরেরদিন বিকেলে আমি গিটার নিয়ে প্র্যাকটিস করছি, মা এসে বললো,
চারু, তুই এভাবে এখানে গান বাজাতে পারিস না। এই সোসাইটি তে আমার একটা ইমেজ আছে। আর এসব বাদ দিয়ে পড়াশোনা কর তাহলে আমার মত কিছু হতে পারবি। এসব আমার বাসায় চলবে না।’
কই বাবা তো কখনো আমাকে গান গাওয়া থেকে আটকায়নি। আর তোমার সোসাইটি? যেখানে কোনো স্বাধীনতা নেই। আর যাই হোক মা, বড় হয়ে আমি তোমার মতো হতে চাই না। একটি বাড়ি, গাড়ি আর ব্যাংকে কিছু টাকা ছাড়া কী আছে তোমার কাছে? থাকতে চাই না তোমার সাথে। আমার সাদামাটা বাবার সেই ছোট্ট বাড়িই আমার জন্যে ঠিক আছে। আমি যাচ্ছি মা। যদি কখনো ইচ্ছে হয় একসাথে থাকার চলে এসো।’
চারু!’থাকো, প্রণাম।’আমি বাসায় চলে আসলাম। দেখি বাবা আমায় দেখে হাসছে।
কীরে থাকতে পারলি না তো ওর সাথে। এত তাড়াতাড়ি চলে এলি।’
আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। বাবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম। বাবা বললো,
আরে আমার চারু! কাঁদছিস কেন? মায়ের কথা মনে পড়লে চলে যাবি দেখা করতে। আমি তো আর আটকাই না, তাই না??
আমি কাঁদতেই আছি। এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ছে কে যেন। বাবা দরজা খুলে ‘থ’ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
মা এসেছে। কোনো কথা না বলেই ভিতরে ঢুকে পড়লো। বললো,
রাতে কী রান্না করেছো? খেতে দাও।’
বাবা মায়ের জন্য খাবার নিয়ে আসতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আমি অবাক হয়ে তাদেরকে দেখছি। মা নিজ হাতে আমাকে খাইয়ে দিলো। মা সেদিন যে এলো আর যায়নি।থেকেই গেলো আমাদের সাথে, তার নিজের সেই
আমিত্বের জগৎ ছেড়ে, আজীবনের জন্য।

Cumillar Voice’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।


মন্তব্য

সর্বশেষ

For Advertisement

সম্পাদক : কাজী মোঃ সাইফুল ইসলাম
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী ফাতেমা আক্তার বৃষ্টি
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : জাগুরঝুলি বিশ্ব রোড, আদর্শ সদর, কুমিল্লা ৩৫০০.
+880 1710-818277
+880 0161812800
ইমেইল : cumillavoice20@gmail.com

Developed by RL IT BD