For Advertisement
বাংলাদেশ থেকে কমলা এসেছে, সে আমাদের বাসার কাজে হেল্প করবে দু বছরের ওয়ার্ক পারমিট হয়েছে ।
২ জুন ২০২৪, ৪:৪৪:৫৭
বাংলাদেশ থেকে কমলা এসেছে, সে আমাদের বাসার কাজে হেল্প করবে দু বছরের ওয়ার্ক পারমিট হয়েছে ।
বাংলাদেশ থেকে কমলা এসেছে, সে আমাদের বাসার কাজে হেল্প করবে দু বছরের ওয়ার্ক পারমিট হয়েছে! তিন দিন কাজ করার পর কমলা বললো, মামা ভাত তরকারি খাইয়া কোন মজা পাই না।
পান-সুপারি, চুন-খয়ার লাগব! পান সুপারি কোথায় বিক্রি হয় জানিনা। অনেক খোঁজাখুঁজি করে বের করা হলো! কমলা খুব খুশী! তিন দিনের মাথায় আবার পান সুপারীর বায়না, সাথে বাবা জর্দা!
জর্দার কথা শুনে আমি আঁতকে উঠলাম, এখানে টোবাকো খুব রেস্ট্রিক্টেড! অবৈধভাবে যারা বিক্রি করে তাদের প্রায়শই জেল জরিমানা হয়! আমি বললাম জর্দা পাবো কোথায়? মামা পান যখন পাইছেন জর্দাও পাইবেন! কান টানলে মাথাও আইবো! পানের দোকানে গিয়ে ডানে বাঁয়ে তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাইজান জর্দা হবে।
অবশ্যই হবে! বাবা, হাকিমপুরী, নুরানী কোনটা নিবেন! যেটা ভালো সেইটাই দেন! কোনোটাই ভালো না, সবগুলাই বিষ! জর্দা হইল ধোঁয়াহীন তামাক! সিগারেটের দশ গুণ ক্ষতি! তাহলে মানুষ খায় কেন নেশা ভাইজান নেশা! পলিটিশিয়ানদের দেখবেন ক্ষমতার নেশা, পুলিশের টেকার নেশা, গরীবের বিড়ির নেশা, তামাকের নেশা! দুই ডলারের জর্দা দেয়া যাবে।
এইটা কি কইলেন ভাই! আমার সাথে মশকরা করেন? দেইখা তো ভদ্রলোক বইলাই মনে হইতাছে! এক কৌটা জর্দার দাম ১৫ ডলার আর আপনে চাইতাছেন দুই ডলারের জর্দা! ভাই এক কাজ করেন দুই ডলার ক্যাশে ফালান আমি জর্দার কৌটা খুইলা ধরি আপনে জর্দার ঘ্রাণ শুইকা বাড়িতে চইলা যান!
ভাই জর্দা আমার জন্য না, বাসার কাজের লোকের জন্যে। দেশ থেইকা জর্দা খাওয়া লোক নিয়া আইসেন। আপনে ফতুর হইয়া যাইবেন ভাই! লোকটা কথাটা মন্দ বলেনি। আগে এক সপ্তায় এক কৌটা জর্দা লাগতো এখন চার দিন না যেতেই কমলা জর্দার বায়না দেয়। আমি বলি, এ গুলো খাওয়া কমাও।
দুনিয়া-দারি তো কিছুই দেখলাম না মামা। স্বাদ আল্লাদ বলতে এই পান আর জর্দা। হেইটা যদি আপনে না দেন তাইলে এই পোলা-মাইয়া, সোনার সংসার ফালায়া বিদেশে আইয়া লাভ কি! আহা ঠিক আছে কাঁদতে হবে না! সাধে কি আর কান্দি মামা! দুঃখে কান্দি, দুঃখে যা চাইছ সবই তো ব্যবস্থা করে করে দিচ্ছি। আবার দুঃখ কেন!
সন্ধ্যায় মামীর ফোন দিয়া ভিডিও কলে পোলা-মাইয়ার লগে তাগ দেইখা দেইখা কথা কই, মনটা শান্তি পায়। কিন্তু মামী বিরক্ত হয়। বেশিক্ষণ কথা কওয়ন যায় না। কছিলাম কি মামা আমারে একটা স্মার্ট ফোন কিন্না দেন! আমার বেতনের টেকার থাইকা পরে কাইটা দিয়েন। গরিবের আর আছে কি মামা- জর্দা দিয়া পান আর মোবাইল ফোন।
২০০ ডলার দিয়ে স্মার্ট কেনা হলো! ফোন পেয়ে কমলা খুব খুশি। প্রথম কয়েকদিন সকাল বিকাল ফোন করে ছেলে মেয়েদের কান ঝালাপালা করে দিয়েছে। ঘণ্টা খানেক চেস্টা করে ইউটিউব রপ্ত করে ফেলল! এখন সে ইউটিউবে শাবানা, ববিতা, রোজিনা আপুদের গান দেখতে দেখতে সবজি কাটে আর রান্না করে। রান্নার স্বাদ ক্রমশ বদলে যেতে থাকে! ডালে তিন গুন লবণ দিয়ে রাখে, মাংস এতো ঝাল হয় খেতে ভয়ই লাগে।
কমলাকে এ সব বললে বলে, রাইতে পেশারের ঔষধ খাইতে ভুইলা গেলে পরদিন মাথা কাম করে না মামা খালি ফরফর করে। তোমার প্রেশার আছে নাকি? অল্প আছে মামা, দেশ থেইকা তিন মাসের ঔষধ লইয়া আইছিলাম ঐ গুলাই খাইতাছি। কি করমু কন – পোলাপান ফোন করলে ফোন ধরে না মামা পেশার ত বাড়বই। একটাও কথা শুনে না।
ফোন ধরে না কেন? ওরা কি করে? দুই মাইয়া আর মাইয়ার জামাই গারমেন্টেসে কাম করে আর পোলাটা অটো চালায়। ওরা কাজে থাকলে তোমার ফোন ধরবে কিভাবে? ফোন করলেই কয় ডাটা নাই। মামা অগ ফোনে ডাটা ভরার ব্যবস্থা কইরা দিয়েন নাইলে পেশার কন্টলে থাকব না। গরিবের জীবনে আর আছে কি মামা – পান-সুপারি, মোবাইল, ইউটিউব আর ডাটা ছাড়া! কমলাকাহিনী -১ শহিদ হোসেন।
For Advertisement
Cumillar Voice’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
© Cumillar Voice ২০২৪ - Developed by RL IT BD
মন্তব্য