প্রচ্ছদ / জেলার খবর / বিস্তারিত

For Advertisement

ছেড়ে চলে যাওয়ার সময়, ছেলেটার চোখে একবুক কান্না ছিল আর মেয়েটার চোখে একবুক অভিমান।

৫ জুলাই ২০২৪, ১:০৯:১২

ছেড়ে চলে যাওয়ার সময়, ছেলেটার চোখে একবুক কান্না ছিল আর মেয়েটার চোখে একবুক অভিমান।

ছেড়ে চলে যাওয়ার সময়, ছেলেটার চোখে একবুক কান্না ছিল আর মেয়েটার চোখে একবুক অভিমান।
তবুও ওরা হারিয়ে গিয়েছিল আলাদা করে, আলাদা পথে, আলাদা চলনে, আলাদা হাত ধরে স্টেশান চত্বরটা নীরবে সাক্ষ্য দিয়েছিল দুবার।
প্রথম বার যখন ওরা হাত ধরে হেঁটেছিল।
শেষ বার যখন ওরা হাত ছেড়ে হেঁটেছিল। বিকালের ব্যান্ডেল লোকালের ছয় নম্বর কামরার জানলার ধারের সিটটায় সেদিন অচেনা এক প্রবীন দম্পতি বসেছিলেন। ওই ছেলেটার কাঁধে মাথা রেখে ওই মেয়েটা সেদিন চোখ বুজে ট্রেনের শব্দ শোনেনি, মেয়েটার ডান হাতের সবকটা আঙুল ছেলেটার বাম হাতে মুঠোবন্দী হয়নি।
শেওড়াফুলি থেকে যে ঝালমুড়ি ওয়ালা ট্রেনে উঠতো, ওদের চিনতো সে।
সেইদিন থেকে ওদেরকে ওই গরীব ঝালমুড়িওয়ালা আর দেখতে পায়নি।
তার পরেও বেশ, কয়েকদিন একটা বড়ো কাগজের ঠোঙায় একসাথে দশ টাকার ঝালমুড়ি মেখে ওই নির্দিষ্ট সিটে রেখে গেছে।
ও ভেবেছে, হয়তো ওরা দুজন অন্য কামড়ায় আছে, হয়তো কিছু পড়ে ফিরে আসবে এই সিটে।
ছেলেটার কাঁধে মাথা রেখে মেয়েটা চোখ বন্ধ করে বসে থাকবে।
কিন্তু, ওরা আর কখনোই আসেনি, মুড়ির ঠোঙা থেকে অন্য কেউ সবটুকু মুড়ি খেয়েছে, কিন্তু ওরা আসেনি, ফুটফুটে দুই কিশোর কিশোরী এসে জানালার ধারে বসেনি।
প্রথম দিন বাড়ি ফিরে খুব কাঁদে ওই ঝালমুড়ি ওয়ালা। হয়তো ওদের মাঝেই ওর ছেলেবেলার মানু কে দেখতে পেতো,
হয়তো ওদের মাঝেই নিজের অসমাপ্ত প্রেমটা খুঁজে নিতে চাইতো,
হয়তো ওঁর দেখা স্বপ্নগুলো ওই দুটো ছেলেমেয়ের মধ্যে পূর্ণ হতে দেখতে চাইতো।
কিন্তু ও বুঝতে পারেনি,
হতভাগার এই ভবিষ্যত টাও অন্ধকারে ডুবে যাবে,
এক প্রজন্ম পরে দেখা নূতন স্বপ্নটাও আবার ভেঙে যাবে। অনেকগুলো দিন পার হয়ে যায়। ওই ছেলেমেয়েদুটো আর এসে ছয় নম্বর কামরার ওই সিটে বসে না, ছেলেটার কাঁধে মাথা রেখে মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়ে না।
একদিন একটু আবেগ বশত ছেলেটা হাত বুলিয়ে দিয়েছিল মেয়েটার মাথায়, কপালে, আর গলার নীচে, বুকের অনেকটা উপরে।
ডেলি প্যাসেঞ্জার এক প্রবীনের মুখের কটুক্তি শুনে চমকে উঠে নিজেকে সামলে নেয় ছেলেটা।
ওই কামরার বেশ কিছু জন ওই প্রবীনকে কড়া কথা শুনিয়ে দেয়, ওই সরল ছেলেমেয়ে দুটোর ব্যাপারে খারাপ কথা বলতে বারন করে।
ওই প্রবীন এখন মাঝে মাঝে ওই সিটে গিয়ে বসে,
ওঁর যে ক্ষমা চাওয়ার ছিল,
ওর সন্তানের বয়সী দুজনকে অপমান করার প্রায়শ্চিত্ত করার ছিল।
তবুও ওরা আসে না,
ঝালমুড়ি ওয়ালা, ওই প্রবীন ভদ্রলোকের মতো আরও অনেকে ওদের আগের মত দেখার জন্য অপেক্ষা করে। তবুও ওরা আসে না,
ছয় নম্বর কামরার ওই সিটে ওরা এসে বসে না,
ছেলেটার কাঁধে মাথা রেখে মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়ে না।
ট্রেনটা কিন্তু রোজ বিকালে হাওড়া থেকে ছেড়ে ব্যান্ডেল অবধি যায়,
শুধু ওরা আর যায় না।
হাওড়ার এক নম্বর প্লাটফর্মে যেদিন ওই দুজনের মিউচুয়াল ব্রেকাপ সম্পন্ন হয়, ওই ঝালমুড়ি ওয়ালা কিন্তু সাক্ষ্য দেয়নি, একদা কটুক্তি করা ওই প্রবীন ওইখানে উপস্থিত থাকেনি।
ওদের সম্পর্কের প্রকাশ অনেকেই দেখেছেন,
কিন্তু ভেঙে যাওয়াটা কেউ দেখেনি।  আজও ওই ঝালমুড়ি ওয়ালা ওই দুজনকে খুঁজে বেড়ায়, ওদের ভাগের ঝালমুড়ি টা অন্য কাউকে এমনিই দিয়ে দেয়।  ওমন কাউকে আর দেখে না,  অবশ্য খোঁজার চেষ্টা ও করে না। একঠোঙা ঝালমুড়ির দাম পাঁচ থেকে দশ টাকা হয়েছে, কিন্তু ওরা আর আসেনি।  বুড়ো ঝালমুড়ি ওয়ালা আর ট্রেনে বারবার ওঠানামা করতে পারে না, তাই বিকেলের ব্যান্ডেল লোকালের ছয় নম্বর কামরার মধ্যে বসেই ঝালমুড়ি বিক্রি করে।
কুড়ি টাকার মুড়ি মেখে একপাশে মেখে রেখে দেয়,
হয়তো কোন একদিন ওরা এসে চেয়ে বসে, বড়বাবা, আমাদের মুড়ি একটা ঠোঙাতেই দিও, আর ঝালটা একটু বেশি দিও। জানোই তো, বদমাশ টা ঝাল খেতে খুব ভালোবাসে।”   অনিবেন্দ্র।

For Advertisement

Cumillar Voice’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মন্তব্য