আমরা সবাই একতালে গাচ্ছি, আর সিনহা গাড়ি চালাচ্ছে, মাঝে মাঝে হাত তুলে শরীর নাচাচ্ছে। গাড়ি ছুটে চলছে পুরাতন এয়ারপোর্ট থেকে নতুন এয়ারপোর্টের দিকে। রাত তখন দুইটার কাছাকাছি আর রাস্তা ও মোটামুটি ফাঁকা।
২৯ এপ্রিল ২০২৪, ৮:৫০:২৮
আমরা সবাই একতালে গাচ্ছি, আর সিনহা গাড়ি চালাচ্ছে, মাঝে মাঝে হাত তুলে শরীর নাচাচ্ছে। গাড়ি ছুটে চলছে পুরাতন এয়ারপোর্ট থেকে নতুন এয়ারপোর্টের দিকে। রাত তখন দুইটার কাছাকাছি আর রাস্তা ও মোটামুটি ফাঁকা।
ঠিক ঐ সময়ে ঢাকার রাস্তায় বিজয় সরণি থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড গ্রুপের কার রেসিং চলে বিভিন্ন নামীদামী রেসিং কারের। এরা একজন আরেক জনকে চ্যালেন্জ করে, কেউ কেউ বাজি ধরে, কেউ বা নিছক মজা করেই গাড়ি রেস করে।
তো আমরা একরাতে গুলশানে ওয়েস্ট ইনের আগের গলিতে ভুট্টোর দোকানে চা খেতে যাচ্ছি, এমন সময় মহাখালীর কাছে একজন আমাদের একপ্রকার চ্যালেন্জ জানিয়ে গাড়ি টান দিলো, সিনহা বললো স্যার, ওকে তো একটু মজা দেখাতেই হয়। এই বলে শুরু করলো রেস, আমরা দুজন সিট বেল্ট বেধে নিলাম, আমি বললাম, ‘Safety first’ সিনহা হাসতে হাসতে বললো, স্যার টেনশন লেনেকা নেহি, দেনেকা”।
আমি বললাম, ” i have the look out, you just drive” আমরা মহাখালী থেকে নিকুঞ্জ/ খিলখেত পর্যন্ত পিছনে লেগেই আছি, এরপর রিজেন্সী হোটেলের পরে গিয়ে আমরা ক্রস করলাম তাকে।
এরপর এয়ারপোর্ট গোলচক্কর ক্রস করে আবার মহাখালী মোড়ে ফেরত আসলাম। অতঃপর বেশ কিছুক্ষণ পরে Mazda RX-8 নিয়ে ঐ ছেলেগুলো আসলো। ওরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, আপনি এই গাড়ি নিয়ে কেমনে পারলেন? সিনহার উত্তর “It’s more of Psychological”.
সিনহার গাড়িতে কেউ প্রথম উঠলে তার পুচ্ছ দেশ আর সিটের সাথে থাকতো না, আর গলা শুকিয়ে কাঠ হবেই। ভয়ে কুঁকড়ে গিয়ে অনেককেই বলতে শুনেছি “আর তোর/আপনার গাড়িতে উঠবো না”।
সিনহা আমার দেখা একজন বেস্ট এবং সেফ ড্রাইভার ছিলো। আমাদের অসংখ্য স্মৃতি আছে সিনহার গাড়িতে। ঢাকার বাইরে এবং ঢাকার মধ্যে।
এমনও হয়েছে আমরা রাত বারোটার দিকে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে যমুনা ব্রিজ ঘুরে ভোরে ঢাকা চলে এসেছি। যমুনা রিসোর্ট এ যাবার ঘটনা পরে বর্ণনা করবো।
একবার আমি আর সিনহা সিলেটে গিয়েছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ডিউটি পালন করতে। আমাদের দায়িত্ব ছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আসার আগে সিলেট রানওয়ে গাড়ি নিয়ে চেক করে আসা। আমরা রানওয়েতে গিয়েছি এস এস এফে সদ্য সংযুক্ত V-8 গাড়ি নিয়ে। সম্ভবত গাড়িটি ছিলো ৪৮০০ সিসির। ড্রাইভার ছিলো মজনু।
রানওয়েতে গিয়েই সিনহা বললো, স্যার আমি চালাই গাড়ি? আমি বললাম ওকে। এরপর মজনুকে সরিয়ে সিনহা গাড়ি চালানো শুরু করলো। আট হাজার ফুট দীর্ঘ এবং প্রায় ১৫০ ফুট চওড়া রানওয়ে, একদম ফাঁকা,(ঐ সময়ে কোন প্লেন ও আসার সিডিউল নাই), সিনহা গাড়ি চালাচ্ছে আর স্পীড বাড়ছে, বাড়তে বাড়তে একসময় গাড়ির স্পীড ২২০ কিমি/ঘন্টা উঠে গেল। আমার জীবনে গাড়িতে সর্বোচ্চ স্পীড ওটাই দেখেছিলাম। সিনহার ও তাই।
এরমধ্যে গাড়ির উপরে লাগানো বিকন লাইট(ইমারজেন্সি লাইট) অতিরিক্ত স্পীডের কারণে ছিড়ে, খুলে রানওয়েতে পড়ে গেল। ঘুরে আসার সময়ে আমরা বিকন লাইট রানওয়ে থেকে অনেক সময় ধরে খোজার পরে তুলে নিলাম।
মজনুকে বললাম, বীকন লাইটের কি হবে? অফিসে কি জবাব দিবা? মজনু মনে হলো জীবন ফিরে পেয়েই খুশী। বললো, “স্যার, জীবন নিয়ে ফেরত আসছি, এই তো শুকুর আলহামদুলিল্লাহ, বীকন লাইটের বিষয় আমার উপর ছেড়ে দেন”।
Cumillar Voice’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।