রাগ করেই ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। এতটাই রেগে গিয়ে ছিলাম যে, বাবার জুতোটা পড়েই বেরিয়ে এসেছি।
৩০ এপ্রিল ২০২৪, ৮:৪৩:৪১
রাগ করেই ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। এতটাই রেগে গিয়ে ছিলাম যে, বাবার জুতোটা পড়েই বেরিয়ে এসেছি।
বাইক যদি কিনে দিতে না পারবে, তাহলে ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানানোর শখ কেন?
হঠাৎ মনে হল পায়ে খুব লাগছে, জুতোটা খুলে দেখি একটা পিন উঠে আছে। পা দিয়ে একটু রক্তও বেরিয়েছে, তাও চলতে থাকলাম। এবার পা একটু ভিজে ভিজে লাগলো। দেখি পুরো রাস্তাটায় জল, পা তুলে দেখি জুতোর নীচটা পুরোই নষ্ট হয়ে গেছে, বাসস্ট্যান্ডে এসে শুনলাম এক ঘন্টা পর বাস, অগত্যা বসে রইলাম।
হঠাৎ বাবার মানি ব্যাগটার কথা মনে পড়লো, যেটা বেরোবার সময় সঙ্গে নিয়ে এসেছিলাম। বাবা মানি ব্যাগে কাউকে হাত দিতে দেয় না, মাকেও না। খুলতেই তিনটে কাগজের টুকরো, প্রথমটায় লেখা ‘ছেলের ল্যাপটপের জন্য চল্লিশ হাজার লোন’।
দ্বিতীয়টায় একটা প্রেসক্রিপশনে লেখা ‘ডাক্তার বাবাকে নতুন জুতো ব্যবহার করতে বলেছেন।’ মা যখনই বাবাকে জুতো কেনার কথা বলতো বাবার উত্তর ছিল ‘আরে এটা এখনও ছ’মাস চলবে।’ তাড়াতাড়ি শেষ কাগজটা খুললাম। দেখি লেখা রয়েছে,’খোকা আমার পুরোনো বাইক পছন্দ করে না, তাই লোন করে হলেও নতুন বাইক কিনে খোকার মুখে হাসি দেখতে চাই।’
বুঝতে পেরেই বাড়ির দিকে এক দৌড় লাগালাম বাড়ি গিয়ে দেখলাম বাবা নেই, জানি কোথায়। একদৌড়ে সেই শো-রুমটায়। দেখলাম স্কুটার নিয়ে বাবা দাঁড়িয়ে। আমি ছুটে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম। কাঁদতে কাঁদতে বাবার কাঁধটা ভিজিয়ে ফেললাম। বললাম, ‘বাবা আমার বাইক চাই না। তুমি তোমার নতুন জুতো আগে কেনো, বাবা।’
‘মা’ এমন একটা ব্যাঙ্ক, যেখানে আমরা আমাদের সব রাগ, অভিমান, কষ্ট জমা রাখতে পারি। আর ‘বাবা’ হলো এমন একটা ক্রেডিট কার্ড, যেটা দিয়ে আমরা পৃথিবীর সমস্ত সুখ কিনতে পারি।
লেখা : আব্দুল্লাহ আল মামুন, পুলিশ সুপার।
Cumillar Voice’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।