গন্তব্য ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি ৯ খাগড়াছড়ির কর্মজীবন ও ভ্রমণ।

১৫ জুন ২০২৪, ৩:৪৬:৪২

গন্তব্য ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি ৯ খাগড়াছড়ির কর্মজীবন ও ভ্রমণ।
যৌথ মহড়া শেষে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাবার পর লেঃকর্ণেল, মেজর।
মহোদয়গন আগত অতিথিদের কৌশল বিনিময় করার পর আমাদেরকে বিদায় দেন। এখন কর্মস্থলে ফেরার পালা, আমি যেহেতু এখানে নুতন তাই আমার সাথে আসা অফিসার ও ফোর্সদের জিজ্ঞাসা করলাম অফিসে ফেরার পথে আমরা কোন কোন পর্যটন স্পষ্ট ঘুরে যেতে পারি। উত্তরে তারা জানালেন, স্যার আমরা আজকে আলুর টীলা এবং রিসাং ঝর্ণা দেখে যেতে পারি। এ দুটিই আমাদের যাবার পথে জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ৬/৭ কিঃমিঃ এর মধ্যে পড়বে।
সবার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডিসিশন নিলাম আমরা প্রথমে রিসাং ঝর্ণা স্পষ্ট দেখে তারপর সময় থাকলে আমরা আলুর টীলা ঘুরে বেড়াবো ইনশাআল্লাহ। সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমারা ২৫ কিঃ মিঃ পথ অতিক্রম করে আগে জিরো পয়েন্টে পৌঁছে আমাদের গাড়ির মুখ ঘুরে নিলাম রিসাং ঝর্ণার স্পষ্ট এর দিকে। উঁচুনিচু, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে মাত্র ১০ মিনিটের ভিতর আমরা পৌঁছে গেলাম রিসাং ঝর্ণার স্পটে। গাড়ি নিয়ে যতটুকু পথ ভিতরে যাওয়া যায় ঠিক ততদুর পর্যন্ত ভিতরে গেলাম। রিসাং ঝর্ণার স্পটে ঢুকতে মাথাপিছু ২০ টাকা করে টিকিট কেটে নিতে হয়। যেহেতু আমরা সরকারি লোক সেহেতু আমাদেরকে টিকিট কাটা থেকে কর্তৃপক্ষ রেহাই দিলেন।
একপর্যায়ে গাড়ি নিয়ে আর এগুনো সম্ভব নয়। কেননা,সামনের রাস্তা একেবারেই ঢালু হয়ে নিচের দিকে চলে গেছে। একমাত্র মোটরসাইকেল এই পথে নামতে এবং উঠতে পারবে। আমাদের ড্রাইভার কনষ্টেবল আমাদেরকে জানিয়ে দিল, স্যার এখান থেকে প্রায় দুই কিঃমঃ পথ হেটে যেতে হবে। কারণ সামনের পথ ধীরেধীরে নিচের দিকে চলে গেছে অর্থাৎ উচুঁ উচুঁ পাহাড় গুলোর পাদদেশে আমাদেরকে পৌঁছাতে হবে। প্রচন্ড গরম আবহাওয়া হলেও আকাশ মেঘলা। তাই কিছুটা স্বস্তি বোধ করছিলাম। গাড়ি থেকে নেমে সবাই সামনের দিকে হেটে চলতে শুরু করলাম। যতই সামনে এগুচ্ছি ততই ইটের সোলিং করা রাস্তা যেনে ঢাল বেয়ে নিচের দিকে চলে যাচ্ছে। বুঝতে পারছি বৃষ্টি এলে উপরে উঠা কঠিন হয়ে যাবে। কারণ ইটের সোলিং করা রাস্তা তখন পিচ্ছিল হয়ে যাবে।
প্রায় আধা ঘণ্টা বা পয়তাল্লিশ মিনিট হাটার পর পাহাড়ের পাদদেশে কাছাকাছি সিড়ি পথ পেলাম। প্রায় ২৩০ ধাপ সিড়ির ধাপ অতিক্রম করে আমাদেরকে আরও নিচের দিকে নেমে ঝর্নার মূল পয়েন্টে পৌছাতে হলো। এখন শুষ্ক মৌসুম, তাই ঝর্ণার স্পটে ঝর্ণার জলের উচ্ছলতা দেখতে পেলাম না। শুধু পাহাড়ের উপর থেকে একটি সরু স্বচ্ছ জলধারার পতন দেখা যাচ্ছে। ঝর্ণার আশেপাশে যে সকল জায়গায় পানির কলতান মুখর থাকতো তা এই মুহুর্তে ম্লান হয়ে আছে। হয়তো বর্ষার মৌসুমে ঝর্ণার তার হারানো যৌবন ফিরে উচ্ছলার প্রকাশ ঘটাবে। ঝর্ণা তার যৌবন সাময়িকভাবে হারালেও এলাকার সৌন্দর্যের কোন ঘাটতি ছিল না। বেশ কিছুক্ষন সেখানে অবস্থান করলাম। ছবি উঠালাম, সেলফি নিলাম এবং ভিডিও চিত্র ধারণ করে নিলাম।
এবার ফিরার পালা অর্থাৎ উপরে উঠার পালা। এখন ধীরে ধীরে রাস্তা উচু হয়ে পাহাড়ের দিকে উচুঁতে উঠে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই উপরে উঠতে আমাদেরকে অধিক শক্তি ক্ষয় হতে লাগলো। সবার কপালে মুক্তার মতো ঘামের দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। একসময় এই ঘামের ফোটা যেনো পানির ধারায় পরিনত হয়ে চোখ মুখ গলা ভিজিয়ে দিতে শুরু করলো। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে পোশাকের নিচেও শরীর ভিজতে শুরু করলো। দম নিতে কষ্ট হচ্ছে। হাসপাস করে দম নিতে হচ্ছে। কিছুক্ষণ চলার পর পথের ধারে দাড়িয়েই বিশ্রাম নিয়ে আবার চলতে শুরু করলাম। এভাবেই কিছুদুর পর পর ৫ মিনিট চলা এবং ১০ মিনিট বিশ্রাম দিয়ে উপরের দিকে উঠতে উঠতে একসময় গাড়ির কাছে পৌঁছে গেলাম। অধিক ঘাম ঝরানোর ফলে শরীরে দুর্বলতা অনুভব করছিলাম। কারণ শরীর থেকে ঘামের সাথে লবন বের হয়ে গেছে। সো লবন পানি খাওয়া দরকার। এখানে তো লবনের পানি বা স্লাইন পাওয়া কঠিন। পরবর্তীতে এলে অবশ্যই এক বোতল স্লাইন পানি তৈরি করেই নিয়ে আসবো ইনশাআল্লাহ। শরীরের উত্তাপ এতটাই বেড়ে গেছে যেনো মনে হচ্ছে শরীরের ভিতর দিয়ে বিদুৎ প্রবাহিত হয়ে চলছে।
গাড়ির ভিতর প্রবেশ করেই ড্রাইভার সাহেবকে বললাম ফুল স্পীডে এসি ছেড়ে দেয়ার জন্য। ড্রাইভার সাহেব তাইই করলেন। তবুও যেনো শরীর ঠান্ডা হচ্ছেনা। সবাই গাড়িতে উঠে বসলে গাড়ি ফিরতি পথ ধরলো। গাড়িকেও মাঝেমধ্যে উচু পথ অতিক্রম করে উঠতে হচ্ছে। কিছুক্ষণের ভিতর সর্পিলাকার মেইন রোডে পৌঁছে গেলাম এবং জিরো পয়েন্টের দিকে গাড়ি ছুটে চলতে শুরু করলো। প্রায় ৭/১০ মিনিট চলার পর আমাদের হাতের ডান দিকে আলুর টীলা পর্যটন এরিয়ায় চলে আসলাম। সবাই বলছে স্যার, আজ কি আলুর টীলায় যাবেন? এমনিতেই তো শরীরের বারোটা বেজে গেছে। ওদের কথা থেকেই অনুমান করে নিলাম, ওরাও আমার মতো ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত। তাই বললাম, এই অবস্থায় অন্য স্পটে গেলে মজা পাওয়া যাবে না। বরং বিরক্তিকর লাগবে। যেহেতু আমরা খাগড়াছড়িতেই আছি সেহেতু অন্য একদিন এসে আলুর টীলা ঘুরে বেড়াবো ইনশাআল্লাহ।
আমার অভিমত রিসাং ঝর্ণা স্পষ্টটা নারী ও শিশুদের জন্য অত্যান্ত কষ্টকর একটি স্পষ্ট। কারণ একটাই এই স্পটে পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছাতে কোন কষ্ট নেই, কিন্তু পাহাড়ের পাদদেশ থেকে উপরে ফিরতে অনেক কষ্ট হয়। শিশু কিশোর ও বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য তো অসম্ভব ব্যাপার। ফিরে এলাম নিজ ডেরায়। কাপড় চোপর ছেড়ে ফ্যানের বাতাসে শরীরের উত্তাপকে শীতল করার চেষ্টা করলাম। শরীর শীতল করতে গিয়ে দুপুরের খাবারের কথা ভুলে গিয়ে ক্লান্তির ছোবলে ঘুমের আবেশে হারিয়ে গেলাম। চলছে ঘুম চলবে।

Cumillar Voice’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।