মুম্বাই গিয়ে এক রাতে আস্তানা হয়েছিল পুলিশ হাজত।
২৩ জুন ২০২৪, ৯:৫৪:২৮
মুম্বাই গিয়ে এক রাতে আস্তানা হয়েছিল পুলিশ হাজত।
সমুদ্রের ধারে বেঞ্চিতে একা শুয়ে থাকতে দেখে দুষ্কৃতিকারী সন্দেহে লক আপে ঢুকিয়ে দেয় পুলিশ, মিঠুন চক্রবর্তীকে।
বন্ধুর হোস্টেলে প্রহরীর দৃষ্টি এড়িয়ে রাতে মাত্র কয়েকটা ঘন্টা শোয়ার বন্দোবস্ত করতে পেরেছিলেন। ভোর রাতে পাঁচিল টপকে বেরিয়ে পড়তে হত। সর্বসাধারণের জন্য নির্দিষ্ট শৌচাগার ঘুরে সাতসকালেই সোজা প্রমোদ নগরীর উদ্দেশ্য। সেখান দাঁড়াতে হবে, নাম কিনতে হবে, প্রমাণ করতে হবে আমি পারি। হ্যাঁ বাংলার ছেলেটি পেরেছিলেন,বলিউড শাসন করেছেন তিনি মিঠুন চক্রবর্তী। নিজে থেকেই বিশ্বাস করতেন, নিজেকে নিজেই বলতেন বাঙালি হয়ে তুমি হেরে যেতে পারো না। বাঙালি ইতিহাস গড়ে, পালিয়ে যায় না।
অনেকেই বলেন কলকাতা থেকে বোম্বেতে পালিয়ে গিয়ে মিঠুন স্টার হয়েছেন। সেই প্রশ্নের উত্তরে মিঠুন স্বয়ং জানিয়েছেন মোটেও স্টার হতে তিনি বোম্বে যান নি। গিয়েছিলেন একটা চাকরি খুঁজতে। ফিল্মে নামা ঘটনাচক্রে। যখন প্রথম বোম্বে গিয়েছেন একেবারে অজানা একটা শহর। সাঁতার না জেনে মাঝসমুদ্রে নামার মত অবস্থা। তবু বারবার মনে হত তিনি জিতবেন। অন্তত প্রাণপণ লড়ব। ব্যক্তিগত জীবনেও হেরে যাওয়া কে সম্মান দেন,হার কে জয় মনে করেন যদি সেটা লড়াই করে হয়।
অভিনয় জীবনে প্রথমবার জাতীয় পুরস্কার পেলেন মৃণাল সেনের ‘মৃগয়া’ ছবিতে অভিনয় করে। মৃণাল সেন প্রথমেই বলে নিয়েছিলেন ” মিঠুন এই ছবিতে হেলেনের মত ড্যান্স নেই।হিরো মার্কা জামাকাপড় নেই। আর শোন, তোমার চুলটা একেবারে ছোট করে কেটে ফ্যালো”। ওই ছবির একটি জেলের দৃশ্য। মৃণাল সেন বললেন” বাঘকে যেভাবে মানুষ খাঁচায় আটকে রাখে সেভাবেই তোকে বন্দী রেখেছে এই এক্সপ্রেশনটা আন। তুই আঁচড়ে কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে দেওয়ার চেষ্টা করছিস। ভয়ঙ্কর রূপ তোর। কিন্তু আসলে অসহায়।বাইরে বেরোতে পারছিস না। মিঠুন বললেন ঠিক আছে আমি রিহার্সাল দিচ্ছি। দেখুন তো এরকম হবে নাকি।
মৃণাল সেন মিঠুনের অজান্তেই ক্যামেরা অন করেছিলেন, হঠাৎ শুনলেন কাট এক্সেলেন্ট। খুব প্রশংসিত হয় শটটা। ছবি তৈরি হওয়ার পর মৃণাল সেন অনেকবার বলেছেন”দারুণ হচ্ছে “।
মিঠুন ভেবেছিলেন তাঁকে উৎসাহ দিতে এসব বলা। পরে কানে এল নতুন ছেলেটা দারুণ কাজ করেছে। তবে জাতীয় পুরস্কার পাবেন ভাবেন নি। অনেক বছর পরে মিঠুন চক্রবর্তী বলেছেন নিঃসঙ্কোচে স্বীকার করে নিতে পারি এখন’ মৃগয়া করতে গেলে আমি ধ্যাড়াতাম।
তবে মিঠুন আবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ‘ তাহাদের কথা’ ছবিতে। শিবনাথের চরিত্রে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন।
বেঙ্গালুরুর এক দুপুরবেলা, গাড়িতে মিঠুন এক পরিচালকের বাড়ি যাচ্ছেন। তিনি জি ভি আইয়ার। প্রস্তাব দিলেন শ্রী রামকৃষ্ণের ভূমিকায় নামার জন্য। মিঠুন বোঝানোর চেষ্টা করলেন ডিসকো ড্যান্সার’ থেকে তাহাদের কথা’ পর্যন্ত ঠিক আছে। রামকৃষ্ণ করতে যাওয়াটা বাড়াবাড়ি হবে। তিনি নাছোড়। শেষ পর্যন্ত রাজি হতে হয়’ স্বামী বিবেকানন্দ’ ছবিতে। আরও একবার জাতীয় পুরস্কার।
যারা বলেন মিঠুন চক্রবর্তী মানে শুধু নাচ, কিছু রোম্যান্টিক দৃশ্য, ভিলেনের সাথে মারামারি। তারা তাঁর জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবিগুলো দেখতে পারেন। মিঠুন চক্রবর্তী নিজে মনে করেন তাঁর কলকাতার ঠিকানা ছিল ২০বি, মাথুর সেন গার্ডেন লেন। উত্তর কলকাতার এমন একটা এঁদো গলি শুধু ঠিকানা লিখলে পোস্টম্যান খুঁজে বার করতে পারতেন না। সঙ্গে লিখতে হত জোড়াবাগান থানার পিছনে। এইরকম অন্ধগলি থেকে রাজপথে যেতে পেরেছেন সেইজন্য নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে করেন। অভিনেতা অথবা সুপারস্টার হতে পারাটা তাঁর কাছে আলাদা করে বিরাট কিছু নয়। মিঠুন চক্রবর্তী পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তবুও অনেকেই বলেন আসলে মিঠুন বাঙালি বলেই বোধ হয় পদ্ম পুরস্কার পেতে তাঁর এত সময় লাগল! যারা এই পুরস্কার পেয়েছেন তাদের অনেকের তুলনায় আরও আগে মিঠুনের এই পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল বলেই ওয়াকিবহাল মহলের অভমত। আজ মিঠুন চক্রবর্তীর জন্মদিবসে আমাদের শুভেচ্ছা ধ্রুবতারাদের খোঁজে।
পুস্তক ঋণ চিত্র ঋণ ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার,সিনেমায় নামতে হলে, মিঠুন চক্রবর্তী। সংগৃহীত।
Cumillar Voice’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।