মনে পড়ে কি আমাদের ছেলেবেলার এক অন্যতম আকর্ষন ছিলো বিয়ে বাড়ীর ভোজ।
২৪ জুন ২০২৪, ৭:৫৭:১৭
মনে পড়ে কি আমাদের ছেলেবেলার এক অন্যতম আকর্ষন ছিলো বিয়ে বাড়ীর ভোজ। কেউ নেমন্তন্ন করতে আসলেই শোনার চেষ্টা করতাম বাবা-মা কে কি বলছে।
তোমরা সবাই যাবে কিন্তু”, ছেলেকে অবশ্যই নিয়ে এস। এসব শুনলে মন নেচে উঠতো নিজের অজান্তেই। অবশেষে সেই প্রতীক্ষিত সন্ধ্যা, দিনভর কম খেয়ে সে এক অদ্ভুত কৃচ্ছসাধন। রাতের জন্য পেটে জায়গাটা রাখতে হবে যে! বিয়ে বাড়ীর সজ্জায় কোনোও আগ্রহ ছিলনা বরং কতক্ষনে খেতে বসবো সেটাই আসল। আমাদের কোনোও লজ্জা ছিলনা। সেসময় স্টার্টরের নামে অতিথিদের চিকেন পকোড়া, কফি, চা, ফুচকা ইত্যাদি খাইয়ে খিদে নষ্ট করার ষড়যন্ত্র আমদানি হয়নি। বুফে হয়নি। বিরিয়ানি ইত্যাদি খাবারের ফিউশনও নেই।
২০ ইঞ্চি চওড়া এবং ৬ ফুট লম্বা পাতলা তক্তার নীচে ইংরাজী A অক্ষরের এর মত দুটো স্ট্যন্ড নিয়ে বেশ নড়বড়ে টেবিল আর কাঠের ফোল্ডিং চেয়ার।
ঠিকভাবে চেপে না বসলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেশ প্রবল। সাদা কাগজ বিছিয়ে দেওয়া হল সেই নড়বড়ে টেবিলের উপর। কেউ পেতে দিল জলে ধোওয়া কলাপাতা, আবার কেউ বসিয়ে গেল শঙ্কু আকৃতির মাটির জলের গ্লাস যেটা টেবিলটার মতই নড়বড় করছে। সবুজ কলাপাতার কোনায় আকাশের তারার মত চিক চিক করে ফুটে উঠলো নুন এবং পাতিলেবু। তখনও বাঙালির রসনায় স্যালাডের আমদানি হয়নি। লুচি, ছোলার ডাল আর লম্বা করে কাটা বেগুন ভাজা। পাড়ার ছেলেরাই এলুমিনিয়ামের বালতির থেকে হাতা দিয়ে ভাত পরিবেশন শুরু করলো। এরপরে এলো মাছের মাথা দিয়ে মুগডাল আর তরকারির ঘ্যাট।
আহা কি স্বাদ! বড়দের সাইলেন্ট ওয়ার্নিং, “এসব দিয়ে বেশী খেলে পেটে মাছ-মাংস খাবার যায়গা থাকবে না” তাই মেপেজুপেই খেতাম। এবার মিষ্টির দোকানের শোকেসে যেরকম ট্রে দেখা যায় সেরকম ট্রেতে করে এল মশলা মাখা বড়বড় মাছের পিস এবং আলাদা বালতিতে ঝোল আলু। মাছের পালা খতম হতে না হতেই খাসির মাংসের আবির্ভাব। পরিবেশনকারীদের চোখমুখও যেন এই সময় যথেষ্ট সিরিয়াস হয়ে উঠতো। ভাত নিতাম আর একবার। ঝরঝরে সাদা ধোঁয়া ওঠা ভাতের চূড়ার উপর দিয়ে যখন মাংসের ঝোলের হিমবাহ নেমে আসে সেই দৃশ্য বর্ননা করতে হলে কাব্যিক জ্ঞান থাকা ভীষণ জরুরী।
সুসিদ্ধ খাসির মাংস ঝোল আর ভাতে মাখিয়ে যখন মুখে দিতাম মনে হোত মানব জীবন সার্থক। তাছাড়া খাসির মাংসের মধ্যে একটা আহ্লাদী পিচ্ছিল ভাব আছে যা ওই চিকেনে কোনোওদিনই পাবে না। ঝোলের মধ্যে আত্মগোপন করে থাকা চোকলা সহ আলুর পিস গুলিও কোনও এক অজানা মন্ত্রবলে হয়ে উঠতো দেবভোগ্য। মাংসের এপিসোড হত সবচেয়ে দীর্ঘ। কেউ কেউ অবলীলায় প্রায় কেজিখানেক উড়িয়ে দিতেন। মাংস শেষ করে যখন পাঁপরভাজায় চাটনী মাখাচ্ছি তখন অনেকেই আলোচনা করতে শুরু করেছেন কিভাবে রসগোল্লা বেশী খাওয়া যায়। একজন এক্সপার্ট তো বলেই দিলেন রস চিপে বের করে দিলে রসগোল্লা বেশী খাওয়া সম্ভব না।
জমাট বাঁধা দইয়ের দুটো খন্ড পাতে পড়ার পরে আঙুলে ভেঙে যখন মুখে তুলছি ততক্ষনে মাঠে রসগোল্লা এন্ট্রি নিয়ে নিয়েছে। হাতে মিষ্টিপান নিয়ে খাবার আসর ছেড়ে যখন কলতলার দিকে এগোই হাত ধোবার জন্য, তখন বিয়েবাড়ীকে যথেষ্টই ম্লান লাগতে শুরু করেছে। গৃহকর্তা কৃতজ্ঞচিত্তে বাবাকে অনুষ্ঠানে আসার জন্য ধন্যবাদ দেন, মা চলে আসার আগে আর একবার নুতন বৌকে দেখতে যান, আর আমাদের চোখ চলে যেত প্যান্ডেল আলো করে বসে থাকা কিশোর,কিশোরীদের দিকে। এক অজানা ভালোলাগা থাকে সেই দেখার মধ্যে। লেখাটা কাউকে কি সেই ছোট বেলার কথা মনে পড়িয়ে দিলো সংগৃহীত। ভালো লাগলে অবশ্যই করে পাশে থাকবেন।
Cumillar Voice’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।