কুমিল্লায় জোড়া খুনের মামলায় ০৬ জনের মৃত্যু দণ্ড ০৭ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ।

৩০ জুলাই ২০২৪, ৮:২৩:২৭

নিজস্ব প্রতিবেদক:
কুমিল্লা সদর দক্ষিণে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে মোঃ গিয়াস উদ্দিন ও মোঃ জামাল হোসেন নামের দুই চাচাতো জ্যেঠাতো ভাইকে ধারালো দা, ছেনী ও হকিস্টিক দ্বারা কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে ০৬ জনকে মৃত্যু দণ্ড এবং ৭ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন কুমিল্লার আদালত। সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টায় কুমিল্লার বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক জাহাঙ্গীর হোসেন এ রায় দেন।
মৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলাধীন ধনাইতরী গ্রামের মোঃ হাজী আতর আলীর ছেলে তোফায়েল আহমেদ তোতা (৩৮), মৃত মমতাজ উদ্দিনের ছেলে কামাল হোসেন (৪৮), হাজী আব্দুর রহিমের ছেলে আলমগীর হোসেন (৩৮), মোঃ ফরিদ উদ্দিনের ছেলে মোঃ মামুন (২৮), মৃত আনোয়ার আলীর ছেলে মোঃ বাবুল (৩৫) ও মৃত আনোয়ার আলীর হারুনুর রশিদ (৪৫)।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলাধীন ধনাইতরীর মৃত জুনাব আলীর ছেলে হায়দার আলী (৬৫), হাজী আব্দুর রহিমের ছেলে আঃ মান্নান (৩২), মৃত মমতাজ উদ্দিনের ছেলে জামাল হোসেন (৪৫), মৃত আঃ খালেক এর ছেলে আবুল বাশার (২৮), মৃত আঃ রশিদ এর ছেলে জাকির হোসেন, মৃত আঃ খালেক এর ছেলে আঃ কাদের (৩২) ও এজহার বর্হিভুত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত আসামি হলেন একই গ্রামের মৃত ইউসুফ মিয়া’র ছেলে আব্দুল কুদ্দুস (৪৫)। খালাস প্রাপ্ত আসামিরা হলেন – একই গ্রামের মৃত মমতাজ উদ্দিনের ছেলে মোঃ আমান (৪০) ও একই উপজেলার গ্রাম চৌয়ারা’র জুনাব আলী মোঃ সেলিম মিয়া (৫০)। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিজ্ঞ জেলা পিপি এডভোকেট মোঃ জহিরুল ইসলাম সেলিম।
মামলার বিবরণে জানাযায়- পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পরষ্পর যোগসাজশে ২০১৬ সালের ১২ আগস্ট রাত অনুমান সোয়া ৮টার সময়  ধনাইতরী জামতলা খোরশেদ আলম এর মালিকানাধীন “ভাই ভাই ষ্টোর” নামক দোকানে প্রবেশ করিয়া আসামীদের হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত হয়ে হায়দার আলীর নির্দেশে আসামি মোঃ তোফায়েল আহমেদ তোতা মিয়া বাদীর বাবা ভিকটিম মোঃ গিয়াসউদ্দিন ও জেঠা জামাল হোসেনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথারিভাবে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে পালিয়ে যায়। তাদের অবস্থা আশংকাজনক জনক দেখিয়া নিহতের স্বজনরা কুমেক হসপিটাল নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রথমে মোঃ গিয়াসউদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন এবং পরে জামাল হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় নিহত মোঃ গিয়াস উদ্দিন এর ছেলে মেহেদী হাসান (২৫) বাদী হয়ে আসামি মোঃ তোফায়েল আহমেদ তোতাসহ ১২জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১২জনকে আসামি করে সদর দক্ষিণ মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করিলে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মঃ সহিদুর রহমান ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করিয়া আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামি মোঃ তোফায়েল আহমেদ তোতাসহ এজহার নামী ১২জন এবং এজহার বর্হিভুত আঃ কুদ্দুসসহ ৩জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তৎপর মামলাটি বিচারে আসিলে রাষ্ট্রপক্ষে ১১জন এবং আসামি পক্ষে দুজন সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক শুনানি অন্তে আসামি মোঃ হারুনুর রশীদ ও আঃ কুদ্দুস এর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনাক্রমে আসামি মোঃ তোফায়েল আহমেদ তোতাসহ ৬জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং আসামি হায়দার আলীসহ ৭জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড; সেই সাথে প্রত্যককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত আসামী প্রত্যেককে অনাদায়ে আরো এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। এছাড়াও আসামি আমান ও মোঃ সেলিম এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন আদালত।
এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্র পক্ষে নিযুক্তীয় বিজ্ঞ কৌশলী জেলা পিপি এডভোকেট মোঃ জহিরুল ইসলাম সেলিম ও অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট মোঃ মজিবুর রহমান বাহার এবং বাদীপক্ষে প্রাইভেট ল’ইয়ার এডভোকেট মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন আমরা আশা করছি উচ্চ আদালত রায় বহাল রেখে দ্রুত কার্যকর করবেন।

Cumillar Voice’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।