এই বছরে কি এক পুরোপুরি নতুন শাকিব খানকেই দেখা যাবে
এই বছরে কি এক পুরোপুরি নতুন শাকিব খানকেই দেখা যাবে
মানতেই হবে যে বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি অর্থাৎ ঢালিউডের বতর্মানে একমাত্র সুপারস্টার শাকিব খান। শাকিব খানই যেন এই ইন্ডাস্ট্রির এক আস্থার নাম। যদিও আমি তার ভক্ত নই। তার পূর্বের অসংখ্য ডিসিশন, মানহীন কাজ ব্লা ব্লা ঐসব কর্মকাণ্ড দেখে তো তার নাম শুনলেই মুখ থেকে এককথায় খারাপ লাগত। মেজাজ গরমও হত তার অসংখ্য অন্ধ ভক্তদের জন্যও যারাও সেই শাকিবের পূর্বের সেই ট্রল হওয়ার জন্য তারাও দায়ী। হ্যাঁ আমি এ কথাই বলব তার অসংখ্য অসংখ্য Loyal ভক্তদের জন্য শাকিব খান একের পর এক মানহীন মুভি করে গিয়েছে। কারণ সেই ভক্তগুলো সেই মুভিগুলো হিট, সুপারহিট করেছে। আমার তো মনে হয় স্ক্রিপ্ট না পড়েই সে রাজি হয়ে যেত মুভি করার জন্য তবুও আবার সেই এফডিসি ঘরানোর পরিচালকদের সঙ্গে 🙄 যারা তাকে লিপস্টিক খান বানিয়ে দিয়েছিল। এখানে দোষ রয়েছে শাকিবের, রয়েছে তার পাগলা ভক্তদের আবার রয়েছে সেই এফডিসির পরিচালকদের। সবচেয়ে বেশি দোষ শাকিব খানেরই কারণ তার যদি রুচি ঠিক থাকত, সে যদি ভাবত আমি একজন দেশসেরা হিরো আমার তো সবার রুচির কথা চিন্তা করে কোয়ালিটি দেখে ভালো ভালো মুভি করা দরকার ভালোমানের পরিচালকদের সাথে কিন্তু সে সেটা করেনি। যাইহোক তাকে নিয়ে এসব বলতে গেলে বলার শেষ হবে না। যতই হোক সে এখনো জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে এখানে সন্দেহ করার কিছুই নেই। ২০১৬ সালে শিকারির মাধ্যমে আমরা পুরোপুরি এক নতুন শাকিব খানকেই পেয়েছিলাম। ইভেন আমি তার শিকারি মুভির হারাবো তোকে সেই গানের লুকটা দেখে পুরোপুরি অবাকই হয়ে গিয়েছিলাম। যে শাকিব খানকে বাংলাদেশের পরিচালকরা জোকারভাবে স্ক্রিনে দেখাত সেই মানুষকেই, সেই একই শাকিব খানকেই কলকাতার পরিচালক জয়দীপ মুখার্জী এক অন্যরকম শাকিব খানকে আবিষ্কার করে। তখনই আমিও বুঝেছি দোষ শুধু তাকেও দিলে চলবে না দোষ বাংলাদেশের পরিচালকদেরও রয়েছে। বাংলাদেশের পরিচালকরা তাকে তার যোগ্যতা অনুযায়ী ইউজ করতে পারেনি। এক্ষেত্রে পুরোপুরি ব্যর্থ কিন্তু সেখানে সফল ছিলেন জয়দীপ মুখার্জী হোক মুভি রিমেক বাট রিমেক হলেও মেকিং ছিল যথেষ্ট। শাকিবের লুক ছিল 🔥 তখনই শাকিবের শাপলা মিডিয়ার সাথে কাজ না করে ভালো ভালো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এবং ভালোমানের পরিচালকদের সাথেই কাজ করার দরকার ছিল যেটা সে বর্তমানে করছে। বলা যায় বতর্মানে সেই ঘাড় ত্যাড়া এখন সোজা হয়েছে, সে তার লাইনে এসেছে। এই বছরে শাকিবের চারটি মুভি নিয়েই কথা বলব যে মুভিতে বলা যায় এক পুরোপুরি নতুন শাকিব খানকেই দেখতে পাবে সবাই। দরদ (Dard), তুফান, রাজকুমার এবং অন্তরাত্মা। এই চারটি মুভি এই বছরে রিলিজ পাবে এবং চারটি মুভি নিয়েই অনেক ভালো কিছুর আশা রাখা যায়।
দরদ (Dard): সুপারস্টার শাকিব খানের প্রথম প্যান ইন্ডিয়ান সিনেমা। শুধু শাকিব খানেরই নয় বাংলাদেশের অর্থাৎ ঢালিউড এর প্রথম প্যান ইন্ডিয়ান সিনেমা এটাই হতে যাচ্ছে। মুভির জনরা অনুযায়ী আশাই করা যাচ্ছে মুভির গল্পটাও খুবই ভালো হবে এবং শাকিব খানকে এক নতুন চরিত্রেই দেখা যাবে। এই মুভির ফার্স্টলুক প্রকাশ পেয়েছে। বেশ ইন্টারেস্টিং ছিল। আজ এই মুভির তেলেগু এবং কানাডার ফার্স্টলুকও এসেছে। অনন্য মামুন পরিচালিত এই মুভিতে সুপারস্টার শাকিব খানের বিপরীতে প্রথমবারের মত অভিনয় করতে দেখা যাবে বলিউড এর জান্নাত খ্যাত নায়িকা সোনাল চৌহান কে। এছাড়াও দেখা যাবে অলোক জেইন, রাহুল দেব, রাজেশ শর্মা, পায়েল সরকার, এলিনা, সাফা তাদেরকে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আছেন কলকাতার এসকে মুভিজ, মুম্বাইয়ের ওয়ান ওয়ার্ল্ড মুভিজ, বাংলাদেশের অ্যাকশন কাট এন্টারটেইনমেন্ট এবং কিবরিয়া ফিল্মস। এই মুভি দিয়ে এসকে ফিল্মসের সাথে শাকিবের পাঁচ নম্বর মুভি করা হবে। এই মুভিটি বাংলা, হিন্দি, তামিল, তেলেগু, মালয়ালাম, কানাডা ছয়টি ভাষায় মুক্তি পাবে। গতকাল মামুনের একটি ভিডিও থেকে জানা গেল বুর্য খলিফায় হবে বলে দরদের প্রমো উন্মোচন। হলে তো ভালোই হয়। এখন দেখা যাক বাকিটা পরিচালক যেহেতু বলেছে আশা রাখা যায়। সবকিছু মিলিয়েই এই মুভিটি খুবই অপেক্ষায় আছি। আশাকরি সবদিক দিয়ে মুভিটি ভালো হবে। প্রথম প্যান ইন্ডিয়ান সিনেমা হিসেবে সফল হোক এটাই চাই। একসাথে অনেকগুলো দেশেই মুভিটি রিলিজ পাবে।
তুফান: দ্বিতীয়ত যে মুভিটি নিয়ে কথা বলব সেটা হচ্ছে তুফান। রায়হান রাফি পরিচালিত, তার পরিচালনায় প্রথমবার এর মত অভিনয় করতে দেখা যাবে শাকিব খানকে। অনেকেই পূর্বে চেয়েছিল রায়হান রাফির সাথে শাকিবের কাজ হোক। কারণ নিঃসন্দেহে রাফি বাংলাদেশের বতর্মান সময়ের একজন ভালো পরিচালক, মেধাবী পরিচালক। রাফি দর্শকদের চাওয়াটা বুঝে, রুচি সম্পর্কে অবগত। রাফির মুভির মেকিং অবশ্যই ভালো হয়ে থাকে আর এই মুভিতে সবকিছুতেই আরও দারুণ কিছুই দেখা যাবে। পুরোপুরি অ্যাকশন জনরার মুভি হিসেবে আশা রাখব মুভির অ্যাকশনগুলো যাতে দেখার মত হয়। গল্পটা নিয়ে আশাবাদী যেহেতু রাফি আছে। এই মুভির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আছে কলকাতার এসভিএস, চরকি এবং আলফা- আই। এসভিএফ এর সাথে দ্বিতীয় কাজ হবে শাকিবের পূর্বে ছিল নাকাব। এই মুভিটি নিয়েও ব্যক্তিগতভাবে অনেক আশাবাদী এবং মুভিটির বাজেটও থাকবে অনেক বেশি। আশাকরি কাস্টিংগুলো চমৎকার হবে।
রাজকুমার: প্রিয়তমার পর হিমেল আশরাফ পরিচালনায় দ্বিতীয় কাজ শাকিব খানের। এই মুভিটি নিয়ে আগ্রহী, একটা এক্সাইটিং কাজ করলেও দরদ এবং তুফান এর মত করছে না কারণ হিমেলের প্রিয়তমা মুভির গল্পটা ছিল গতানুগতিক। অন্যান্য বাংলা মুভির মতোই গতানুগতিক কাহিনী ছিল। বুঝলাম প্রিয়তমা বাংলা মুভির ইতিহাসে সবচেয়ে ইনকাম করা মুভি। মুভিটি অবশ্যই দেশ এবং দেশের বাহিরে ভালো চলেছে কিন্তু এটা শেষ সিনগুলোর জন্যই। শেষ আধা ঘন্টা খুবই ভালো ছিল, ইমোশনাল ছিল। ভালো লেগেছিল আর শাকিবের প্রবীণ এর লুকটা এককথায় আগুন ছিল। এই লুকটা সত্যি প্রশংসনীয় ছিল। রাজকুমার মুভিতে শাকিবের নায়িকা হিসেবে দেখা যাবে কোর্টনি কফি কে। চার মুভিতে চার নায়িকাই থাকবে বলা যায়। পরিচালক হিমেল আশরাফ যেহেতু চ্যালেঞ্জ দিয়েই বলেছে প্রিয়তমার থেকে ভালো কিছুই করে দেখাবে রাজকুমারে সেই হিসেবে ভালো কিছুর আশা রাখা যায়। এই মুভির কাস্টিং ভালো হবে কিন্তু শেষ কিছুদিন পূর্বের এক গানের স্টিল পিকচার দেখে মোটেও ভালো লাগেনি। শাকিবের হাস্যকর কস্টিউম ছিল। যেটা শাকিবের সাথে যায় না আমি মনে করি। তার এসব ছোট্ট ভুলেই পরবর্তীতে অনেক কিছুই হতে দেখা যায়। যদিও এসবে কস্টিউম ডিজাইনাররা থাকে তবুও তার এসবে খুবই সতর্ক হওয়া দরকার। পাসওয়ার্ড এর সময়েও সোয়াগ গানের কস্টিউম নিয়ে কথা উঠেছিল। সমালোচনা হয়েছিল। হিমেল আশরাফ যদি প্রিয়তমার মত রাজকুমারেও দর্শকদের মন গলাতে চায় তাহলে এবার সে ধরাও খেয়ে যেতে পারে আবার এখানটায় অনেক চ্যালেঞ্জিংও রয়েছে পরিচালকদের মধ্যেই। আই থিংক এই বিষয়টিও হিমেল আশরাফ ভালোভাবেই মাথায় রাখবে।
অন্তরাত্মা: শেষ যে মুভিটি নিয়ে কথা বলব সেটা হচ্ছে অন্তরাত্মা। গল্পকার সোহানী হোসেন যে গল্পকার পূর্বে শাকিব খানের অভিনীত সত্তা মুভির গল্প লিখেছিলেন এবং সত্তা নিঃসন্দেহে শাকিবের ক্যারিয়ারে ভালো মুভির মধ্যে একটি। অন্তরাত্মা মুভির প্রযোজক এবং গল্পকারও এই সোহানী হোসেন। মুভিতে প্রথমবারের মত শাকিবের বিপরীতে অভিনয় করেছে কলকাতার বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী দর্শনা বণিক। মুভির গল্পটা খুবই দারুণ হবে এটা বলাই যায়। আর ওয়াজেদ আলী সুমনের মেকিং খারাপ হয় না। কিন্তু মুভিটি এত বছর হয়ে গেল 🤧 এখনো মুক্তি দিল না। প্রযোজক এর মুক্তি দেওয়া নিয়ে কোন মাথা ব্যথাই নেই। লিডার আমিই বাংলাদেশ মুক্তি পেয়ে গেল, প্রিয়তমা পেয়ে গেল কিন্তু এখনো এই মুভি মুক্তি দিল না 🙄 শুনেছি প্রযোজক তার ব্যক্তিগত ঝামেলায় আছে তাই মুভিটি মুক্তিও দেওয়া হচ্ছে না। আশাকরা যায় এই বছরে মুভিটি রিলিজ দেওয়া হবে যদিও পূর্বে এই মুভির যে হাইপ ছিল তার ছিটেফোঁটাও এখন নেই 😏 একটি ভালো সময় দেখে মুক্তি দেওয়াই প্রযোজক এর মঙ্গল।
পরিশেষে বলব আমি শাকিবের ভালো, খারাপ সব নিয়েই কথা বলেছি। পূর্বের তার অনেক কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা হলেও, ট্রল হলেও সে এখন নতুন কিছুর চেষ্টা করছে। নিজেকে নিজে আরও ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এক অন্যরকম শাকিব খানকেই এখন দেখা যাচ্ছে। যেটার প্রমাণ তার মুভির লাইনআপ। ভালো কাজ করলে তো অবশ্যই সেটার এপ্রিশিয়েট করাই যায় এবং মানহীন কাজ হলে সেটার গঠনমূলক সমালোচনা। আপনারা কোন মুভিটি নিয়ে বেশি আগ্রহী বলতে পারেন। শিকারির পর এক নতুন শাকিব খান কে দেখা গেলেও সেটা বেশিদিন সে ধরে রাখতে পারেনি আশাকরি এবার সেই ভুলগুলো থেকেই সে শিক্ষা নিবে এবং সামনে এগিয়ে যাবে।
Cumillar Voice’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।