শিক্ষক দিবসের কবিতা পাঠ করলেন জাকারিয়া খান সৌরভ।
শিক্ষক দিবসের কবিতা পাঠ করলেন জাকারিয়া খান সৌরভ।
আমি দেখেছি সাবেক অধ্যক্ষ মরহুম সিরাজুল ইসলাম খান হুজুরকে বিচক্ষণ হাতে মাদ্রাসা পরিচালনা করতে। দেখেছি সবেক উপাধ্যক্ষ মরহুম আলী আসগর হুজুরকে (গৌরসারের হুজুর) ইসলামের ইতিহাস পড়াতে গিয়ে আবেগ প্রবণ হয়ে যেতে। হাদীসের ব্যাখ্যা করতে যেয়ে শ্রদ্ধাভরে ইমাম আবু হানিফা (র.)-এর নাম নিতে।
আমি দেখেছি সাবেক সহকারী অধ্যাক মোঃ আবদুল জলিল হুজুরকে (কাজিয়াতলের হুজুর) জানাজার সালাতে আবগময়ী কুরআন তেলাওয়াত করতে। দেখেছি সাবেক সিনিয়র শিক্ষক মরহুম আব্বাছ আলী হুজুরকে (আমার খালু) ভাব গম্বীর ভাবে তাফসীর পড়াতে।
আমি দেখেছি সাবেক সহকারী অধ্যাপক আবদুল মজিদ খান হুজুরকে (আমার বাবা) চোখ বন্দ করে হাদীস আর ফিকাহ পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে ছাত্রদের উদ্দেশে বুঝে আইছেনি বলতে। দেখেছি সাবেক আরবি প্রভাষক (বর্তমান উপাধ্যক্ষ) মোঃ ছফিউল্লাহ হুজুরকে ক্লাসে পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে সুন্দর সুন্দর গল্প করতে (বালাম চাউলের ভাতে ভাংলা মাছ পাতে)।
আমি দেখেছি সাবেক বাংলা প্রভাষক (প্রয়াত) চিন্তা হরন মজুমদার স্যারকে বার্ষিক মাহফিলের পোস্টার ও হেম্বিল নিয়ে ব্যাস্ত থাকতে আর মাহফিলের দিন লাইব্রেরীতে বসে তম্ময় হয়ে ওয়াজ শুনতে। দেখেছি সাবেক সহকারী শিক্ষক মরহুম আবদুল ওহাব স্যারকে (আমার শশুর) তীর্যকভাবে ইংরেজি গ্রামার পড়াতে আর ফাঁকে ফাঁকে উর্দু বলতে।
আমি দেখেছি সাবেক সহকারী শিক্ষক মোঃ জয়নাল আবেদীন হুজুরকে দরদ ভরা কন্ঠে ছাত্রদের ডাকতে। দেখেছি সাবেক সহকারী শিক্ষক মরহুম আবদুল হান্নান হুজুরকে, মরহুম আহম্মদ শরিফ স্যার, ক্বারী আবুল কাসেম হুজুরকে, সহকারী শিক্ষক জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া স্যারকে, জয়নাল আবেদীন স্যারকে, শাহ আলম স্যারকে, ইবতেদায়ী শিক্ষক রহমত উল্লাহ হুজুরকে, আজহারুল ইসলাম স্যারকে, মিজানুর রহমান স্যারকে নিরলসভাবে পাঠদান করতে।
আমি দেখেছি সাবেক ইবতেদায়ী প্রধান মরহুম ফয়জুর রহমান হুজুরকে সাদামাটা ভাবে জীবন যাপন করতে। দেখেছি সাবেক জুনিয়র শিক্ষক মরহুম আবুল হোসেন হুজুরকে হেসে খেলে ক্লাস নিতে।
এখন আর দেখি না সাবেক অফিস সহকারী মরহুম শহীদুল্লাহ স্যারকে পরীক্ষার আগে প্রবেশপত্র হাতে হাতে পৌঁছে দিতে। দেখি না সাবেক লাইব্রেরীয়ান শামসুল হক হুজুরকে খানসাব হুজুরের পকেট থেকে পান নিয়ে খেতে আর গল্পে গল্পে লাইব্রেরীকে মাতিয়ে রাখতে। এখন আর দেখি না সাবেক দপ্তরী মরহুম সুজন ভাইকে ঘন্টা পিটাতে পিটাতে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হতে। দেখি না সাবেক নাইট গার্ড মরহুম ইউনুস মোল্লাকে পোস্ট অফিসে বসে চিঠির খামে খট খট সীল মারতে।
এখন আর দেখি না সাবেক দপ্তরী মরহুম জহিরকে কোন টিচারের অনুপস্থিতিতে ক্লাশে পক্সি দিতে। এখন দেখি মাদ্রাসার অবকাঠামোর অনেক উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক অনেক দু্রত্ব সৃষ্টি করেছে। এখন দেখি মাদ্রাসার মসজিদ অনেক বড় হয়েছে কিন্ত বাড়ি থেকে সিরু মোল্লার আজানের সুর আর শোনা যায় না। এখন দেখি মাদ্রাসার পাশে বাজার বসেছে কিন্তু মরহুম মফিজ আলী সরদারের দোকানের মধু বিস্কুট কিংবা মুড়ি চানাচুরের সেই স্বাদ আর রহিলো না ।
Cumillar Voice’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।