কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ এক শতকের বেশি সময় বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সভ্যতার ধারক ও বাহক।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ এক শতকের বেশি সময় বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সভ্যতার ধারক ও বাহক।
অধ্যাপক আহমদ শরীফ বলেন,“শতবছর আগে এমন একটি কলেজ ছিল এক একটা বিশাল অন্ধকার অঞ্চলে এক একটা সুউচ্চ আলোকস্তম্ভ-এক একটা বাতিঘর স্বরূপ।”কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ তৎকালীন পূর্ব ভারতের অন্যতম নামকরা কলেজ ছিল। এ-সুখ্যাতির পেছনে ছিল কলেজের সৃষ্ট সুদীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
জমিদার রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায় উদ্যোগে ১৮৮৬ সালে ‘রায় এন্ট্রান্স স্কুল’ নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৮৮ সালে মহারানি ভিক্টোরিয়ার রাজত্বের ৫০বছরে সুবর্ণ জয়ন্তী স্মারক চিহ্ন স্বরূপ এটিকে মহারানি ভারতের সম্রাজ্ঞীর নামে ‘ভিক্টোরিয়া স্কুল’-এ নামকরণ করা হয়েছিল (বর্তমান নাম ‘কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল’)। বিদ্যালয়ের সাফল্য এবং প্রদেশের এই অঞ্চলে উচ্চ শিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায় ১৮৯৯ সালের জুনে কলেজের ক্লাস চালু করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।১৮৯৯ সালের ২২ জুন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এফ.এ স্ট্যান্ডার্ড পর্যন্ত বিদ্যাপীঠের অনুমোদন করে কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। শুরুতে প্রতিষ্ঠাতা পাঁচ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটির সহায়তায় কলেজ পরিচালনা করেন। তিনি সভাপতি এবং কলেজের অধ্যক্ষ কমিটির সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
কলেজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিক তারিখ নিয়ে মতদ্বৈততা: কলেজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিক তারিখ নিয়ে দুটি মত পাওয়া যায়। একটি হলো ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৯ সাল এবং অন্যটি হলো ২৪ নভেম্বর, ১৮৯৯ সাল। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ সম্পর্কিত একমাত্র গবেষণাধর্মী গ্রন্থেও লেখক অধ্যাপক তিতাশ চৌধুরী তাঁর গ্রন্থ ‘কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ: এ যুগের কিংবদন্তি’-এ ত্রিশ ও চল্লিশ দশকের ভিক্টোরিয়া কলেজ ক্রনিক্যাল ও ম্যাগাজিনগুলির তথ্যের ভিত্তিতে ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৯ সালকে কলেজের প্রতিষ্ঠা বার্ষিক দিবস হিসেবে উল্লেখ করেন।
কলেজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিক তারিখ সম্পর্কিত বিভ্রান্তি দূর করার জন্য ওল্ড ভিক্টোরিয়ান্স নামক প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন কলেজের প্রাক্তন ছাত্র আবদুল আউয়ালকে (আবু হেনা) কলেজ প্রতিষ্ঠা বার্ষিক তারিখের তথ্য অনুসন্ধানের দায়িত্ব প্রদান করে। ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর ওল্ড ভিক্টোরিয়ান্সের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় তিনি ২৪ নভেম্বর, ১৮৯৯ সালকে কলেজের প্রতিষ্ঠা বার্ষিক দিবস হিসেবে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
এক্ষেত্রে তিনি ১৯৪৬ ও ১৯৪৯ সালের কলেজ ছুটির তালিকায় কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আনন্দচন্দ্র রায়-এর জন্মতারিখ ২৪ নভেম্বর তারিখকে ‘ফাউন্ডার্স ডে’ হিসাবে ছুটি ঘোষণা এবং ১৯৪৯ সালের অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের সভার কার্যবিবরণে কলেজের ৫০ বছর পূর্তি তথা সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের জন্য ২৫ থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত কর্মসূচি গ্রহণ করার কারণে কলেজ প্রতিষ্ঠাতা আনন্দচন্দ্র রায়-এর জন্মদিনেই কলেজের উদ্বোধন হয়েছিল বলে ধরে নেয়া হয়।
অধ্যাপক তিতাশ চৌধুরী এ মতের বিরোধিতা করেন এবং তিনি তাঁর গ্রন্থে বলেন, “সবচেয়ে মজার ব্যাপার, কলেজের প্রতিষ্ঠা বার্ষিক নিয়ে এতো যে আলোচনা, গবেষণা, কালক্ষেপণ, কমিটি গঠন ও তোলপাড় অথচ কিনা কলেজ প্রাক্তন শিক্ষার্থী সমিতি কর্তৃক প্রথম প্রকাশিত পত্রিকা ‘সরসী তীরে’-এর দ্বিতীয় পৃষ্ঠায়ই ওই তারিখ (অর্থাৎ২৪শে সেপ্টেম্বর, ১৮৯৯) লিপিবদ্ধ রয়েছে। কী বিস্ময় !” কলেজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিক তারিখ নিয়ে নির্ভুল তথ্যের জন্য আরো গবেষণা হওয়া দরকার।
Cumillar Voice’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।